সেই বীরাঙ্গনা ববিজানকে অর্থ সহায়তা

জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:১৩ | প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:৫১

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতিত টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বীরাঙ্গনা ববিজানকে এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বীরাঙ্গনা হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া তার নামে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে সেখানে ঘর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুব হোসেন বীরাঙ্গনা ববিজানের হাতে দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ছয় হাজার টাকা তোলে দেন। এ সময় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মুনীরা সুলতান, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম আহমেদ, ঢাকাটাইমসের মির্জাপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৫ ও ২৮ ডিসেম্বর ববিজানকে নিয়ে ঢাকাটাইমসে স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে খবরটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর নজরে আসে। পরে তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুব হোসেনকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আজ ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রদান করেন।

প্রত্যন্ত তৃণমূল থেকে খোঁজ করে একটি সত্য ঘটনা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশের জন্য অতিরিক্ত সচিব ঢাকাটাইমস প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেনকে মোবাইল ফোনে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে ঢাকাটাইমসে খবর পড়ে ববিজান বেগমকে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম আহমেদ একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড, একটি কম্বল ও বিছানার চাদর দেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বীরাঙ্গনা ববিজান বেগম। এ কারণে স্বামীও তাকে ছেড়ে গিয়েছিল।

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন তিনি। বয়স্ক বা বিধবা ভাতা কিংবা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাননি তিনি। সম্প্রতি তাকে নিয়ে ‘মির্জাপুরের বীরাঙ্গনা ববিজানের দুঃখগাঁথা’ ও ‘কার্ড পেলেন ববিজান’ শিরোনামে ঢাকাটাইমসে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বীরাঙ্গনা ববিজান বেগম উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত আরাদন আলীর মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একদিন পাকবাহিনী তাদের গ্রামে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিএসসিসহ আরও কয়েকজনের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিনই পাক বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ববিজানসহ আরও কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষিতা হওয়ায় স্বামীর সংসার ছাড়তে হয় তাকে। বর্তমানে সরকারি জমিতে ঘর তুলে থাকেন তিনি। ঢাকাটাইমসে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বৃদ্ধা ববিজানের খোঁজ খবর নেন মির্জাপুরের ইউএনও।

এদিকে ঢাকাটাইমসে সংবাদ প্রকাশের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ঢেউটিন, নগদ টাকা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়ে উচ্ছ্বসিত ববিজান বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও কেউ আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। সাংবাদিক লেখার পর অনেকেই খোঁজ খবর নিচ্ছে।’ তিনি ঢাকাটাইমস প্রতিনিধি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলনের জন্য মনভরে দোয়া করেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বলেন, ঢাকাটাইমসে ববিজানকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে। পরে অতিরিক্ত সচিবের নির্দেশে তাকে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৩জানুয়ারি/প্রতিনিধি/ইএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :