মুক্তাগাছায় ৪৭ বছরেও হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ

মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৫৮

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সরকারের আগ্রহ থাকলেও শহীদ পরিবার জমি দান না করায় গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী মুক্তাগাছা পৌর এলাকার ঈশ্বরগ্রাম মাঝিপাড়ায় একই বাড়ির পাঁচ জনকে গুলি করে হত্যা করে। সরকারি-বেসরকারিভাবে এই স্থানে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নিহতের স্বজনদের জমি দানে অনীহার কারণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, পাকহানাদার বাহিনী মাঝিপাড়ার কেরাল চন্দ্র দাস, ছোট বিরেণ, বড় বিরেণ, দীগেন্দ্র চন্দ্র দাস ও ঠাকুর দাসকে ৭১’সালে তাদেরই বাড়ির সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি ধরে রাখতে দুই হাজার সালের পর থেকে কয়েক দফায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয় ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। কিন্তু শহীদদের বংশদ্ভূতরা জমি দিতে অস্বীকার কারায় মুছে যেতে বসেছে ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।

ঘটনাস্থলের জমির মালিক এখন শহীদদের ওয়ারিশ কার্তি দাস ও বেঙ্গু চরণ দাস। তারা ইতোমধ্যে ওই জমি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে আগ্রহী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ কয়েকদফা উদ্যোগ নিয়েছে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। শহীদদের ওয়ারিশরা একচুল পরিমাণেরও জমি দিতে নারাজ।

মুক্তাগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল কাশেম জানান, সরকারিভাবে মুক্তাগাছার প্রায় সকল বদ্ধভূমি ও হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু এখানেই ঘটছে ব্যাঘাত।

তিনি জানান, এখানে স্মৃতিস্তম্ভ না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতি হারিয়ে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাগাছা: ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল। এই দিনে জনপদ মুক্তাগাছার মুক্তিকামী জনতার সকল বাধা অতিক্রম করে পাকবাহিনী জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে মুক্তাগাছায় প্রবেশ করে। সেদিন শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে জিপ ও ট্রাকের এক বিশাল কনভয় নিয়ে হানাদার বাহিনী দখল করে নেয় মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছা প্রবেশ করার সময় রাস্তার দু’পাশের জনবসতির উপর পাকবাহিনীর কনভয় থেকে অবিরল গুলিবর্ষণে, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিকামী জনতা। সূচনা হয় মুক্তাগাছার বুকে বর্বর পাকবাহিনীর দীর্ঘ নয় মাসের ধংসযজ্ঞের। সৃষ্টি হয় অসংখ্য বদ্ধভূমি।

স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান রয়েছে- এমন কয়েক ব্যক্তির সক্রিয় প্রচেষ্টায় সংগৃহীত তালিকা অনুসারে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মুক্তাগাছার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন- আজগর আলী, আজিজুর, বছির উদ্দিন, খালেক, সাত্তার, নূরুল ওয়াহিদ, কালাম আজাদ, ইয়ার মামুদ, দ্বিজেন্দ্র, ভবতোষ, নরুজ্জামান, উমেদ, কার্তিক, বাবার আলী, মকবুল, মনির, মহর, মোফাজ্জল, শামসুল, মেহের, সাহার, হযরত, হাসেন, হাতেম আলী। মুক্তিযদ্ধে আরও শহীদ হয়েছেন- মনিরুদ্দীন, পরেশ দাস, সুরেন্দ্র, অমিয়া, ব্রজেন্দ্র, বাসুয়া, হরিপদ, সুবোধ, রবীন্দ্র, শ্রীশ, অমর, জমিদার বকুল আচার্য চৌধুরী, ত্রৈলোক্য, মিজরিয়া, নকুল, কুমুদ, কানু, কুমুদ বন বিহারী, ভরত, দীনেশ, নীহার, যতীন্দ্র, দামু, আমেনা, বেগম, হাফিজা, নজীবদ্দিন, হাজেরা, বানেছা, ফিরোজা, ফনীন্দ্র, সুধীর, সুরেন্দ্র, জিনমুন্সী, ইন্দুবালা, কুমার ঠাকুর, জীতেন্দ্র, নারায়ণ, যতীন্দ্র, আম্বিয়া, রেজিয়া, আসাদ, কিন্দো, মালেকা, খালেতন, রহিমন, হামেদা, ছুমেদ, দিনুরা, সবুরন, জামফত, সুরুজা, জুলেখা, দেলজান, নজরুল, বিবি হাওয়া, সকিনা, নবীরন, ময়না, মোতালেব, রহমত, মানিকজান, হযরত, হাসনা, গজেন্দ্র, সিদ্দিক, অভিমন্যু, অমর, ফনীন্দ্র, আইনউদ্দিন, কাজিমুদ্দিন, সন্তোষ, জগদীশ, জীতেন্দ্র, ফয়েজ, বিনোদ, ভারতী, তোরাব, নারায়ণ, সন্তোষ, আজিজ, দীনদয়াল, দীনেন্দ্র, বীরেন্দ্র, সুরেন্দ্র, বীরেন্দ্র দাস, ডা. অনিল চন্দ্র বণিকসহ আরো অনেকে। স্বাধীনতার পর থেকে বহু স্থানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিচিহ্ন ভাস্কর্য ও শহীদদের স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বদ্ধভূমিও সংরক্ষণ করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :