‘তুমি এই চোখে তাকিও না লুটপাট হয়ে যাবে’

আলাউদ্দিন আল আজাদ আলিফ
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৩৫ | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৩৭

আলাউদ্দিন আল আজাদ আলিফ। পেশায় সংবাদকর্মী হলেও বাইকার্স হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। কেননা, বাইকের সঙ্গে তার সখ্য বহুদিনের। পাহাড়ি জনপদে বেড়ে ওঠা এই তরুণের বাইকে হাতেখড়ি হয় কৈশোরে। সেটি ছিল তার বাবার বাইক। এরপর রাজধানীতে এসে প্রথম বাইক কেনেন। হালফ্যাশনের বাইকের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বরাবরই। আর তাই তো একটার পর একটা বাইক বদলেছেন। আলিফ তার বাইক নিয়ে সড়ক দাঁপানোর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন পাঠকদের সঙ্গে। অনুলিখন করেছেন আসাদুজ্জামান।

ছোটবেলা থেকেই আমি মোটরসাইকেল চালাই। যখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি তখন মোটরসাইকেলে হাতেখড়ি হয়। অল্প বয়সে মোটর সাইকেল চালানোর কথা তখন কেউ

চিন্তাই করতে পারতো না। কিন্তু আমি যে জনপদে বড় হয়েছি সেখানকার পরিবেশটাই অন্য রকম। প্রকৃতির অপার লীলাভূমি বান্দরবানে আমার বসতি।

একদিন বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলের আরোহী হয়ে দূরে কোথাও যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যেতেই ভাইয়াকে বললাম,‘আমি মোটর সাইকেল চালাতে পারি। দেবেন নাকি

চালাতে?’বড় ভাইয়া আমার কথা বিশ্বাস না করলেও চালানোর সুযোগ দিলেন। সেই শুরু।

এরপর সময় সুযোগ পেলেই মোটরসাইকেল নিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে পরতাম। বাবার হোন্ডা সিডিআই ১২৫ ছিল আমার প্রথম দ্বৈরত।

শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপনা কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটা সময় ঢাকায় পারি জমাই। ঢাকায় এসে দেখলাম, তরুণরা রাজপথে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব দেখে নিজের মনেও মোটরসাইকেল চালানোর ইচ্ছে জাগে। সে সময় বাজাজের পালসার সবে মাত্র বাজারে এসেছে। সাইকেলটি মনে ধরে যায়। কিনে নিই পালসার ১৩৫ সিসির মোটরসাইকেল।

পালসারের সঙ্গেই চারটি বছর কেটে যায়। এরই মাঝে অনেক নতুন নতুন বাইক শহরের রাস্তায় দেখতে পাই। সেগুলো দেখতে দেখতে নিজের পালসারটাকেও পুরনো মনে হয়।

একদিন এক সহকর্মী ১০০ সিসির মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে আসে। সেটা দেখতে অনেকটা ইয়ামাহা এফজেডএসের মত।

প্রথম দেখাতে মোটরসাইকেলটির প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়। যদিও কিওয়ে নামের এই মোটরসাইকেল কোম্পানিটির নাম আগে শুনিনি। বাইকটির মডেল ছিল ‘কিওয়ে আর কে এস ১০০’।

সেই সহকর্মীকে অনুসরণ করে কোন এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলে ঢুঁ মারি কিওয়ের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্পিডোজের প্রধান শো রুমে। পরিচয় হয় প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি জামান ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি কিওয়ে কিনতে অভয় দেন। মডেল পছন্দ করি কিওয়ে আরকেভি ১৫০ সিসি। প্রথম দেখাতে আপনার বাইকটাকে ভীষণ এক রোখা মনে হবে। হেডলাইটের চাহনিটা এমন যেনো সে কিছুতেই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে চায় না। আস্তে আস্তে কিওয়ের বাইকের ভক্ত হয়ে যাই। কেননা, কিওয়ের কর্মীরা আমায় সব সময় সহযোগিতা করেছে।

দেশে যারা কিওয়ের মোটরসাইকেল চালান তাদের নিয়ে একটি সংগঠন আছে। নাম বিডি কিওয়ে রাইডার্স(কেআরজেড)। এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলো ভ্রমণে অংশ নিয়েছি।

একবার বাইকটি নিয়ে প্রথম ঢাকা থেকে বান্দরবান ট্যুর দেই। সেখানে গিয়ে পাহাড় চষে বেড়াই। শুধু কি পাহাড়? বাইক নিয়ে সমুদ্রের নোনা জল ছুঁয়ে এসেছি।

সেবারের বান্দরবান ভ্রমণ আমার সাধের আরকেভি ১৫০ সিসি বাইকটি এক বন্ধুর মনে ধরে। কি আর করা! তার কাছে সেটি বিক্রি করে দিয়ে বাসে ঢাকা ফিরে আসি। ফেরার পথে বাইকটির জন্য কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। অনেকদিনের সঙ্গী বলে কথা। কিন্তু বন্ধুর হাসিমাখা মুখটি মনে পড়তেই সব খারাপ লাগে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।

ঢাকায় এসে বাইক কেনার জন্য কিওয়ের স্পিডোজের শোরুমে যাই। শোরুমে সাজানো অনেকগুলো বাইকের মধ্য থেকে একটা বাইক নজর কাড়ে। দেখতে যেনে সাদা পরীর মত লাগে। মডেল কিওয়ে আরকেএস ১৫০। কিনে নেই সেটি। যদিও এক বড় ভাইয়ের কাছে এই মডেলের বাইকটির গুণকীর্তন শুনেছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি। আরকেএস১৫০ দিয়ে সড়ক-মহাসড়কে গতির ঝড় তুলেছি। এটি দিয়ে রাইড শেয়ারিং করেছি। এভাবে চলছিল কিছুদিন।

এরই মাঝে পরিচিত কয়েকজনের কাছে ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ২০১৭ এডিশনের কথা শুনলাম। সদ্যই এসেছে। এসেই বেশ সাড়া ফেলেছে। বলে রাখা ভালো আমি ইয়ামাহা এফজেডএসের ভক্ত। কোথাও এই বাইক দেখলে চোখের দেখা দেখে নেই। ওদিকে আরাফাত নামের এক সংবাদকর্মী বড় ভাই এতদিন কিওয়ের আরকেএস ১৫০ চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও আমার মত নতুন মডেলের বাইক চালাতো ভালোবাসেন। তাই দুজনে মিলে ঠিক করলাম ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ২০১৭ এডিশনের বাইকটি কিনবো।

গত মাসে মিরপুর ডিওএইচএসের বিইউপি কালচারাল ফেস্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানলাম ইয়ামাহার পৃষ্ঠপোষকতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ইয়ামাহার মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য বুকিং নেয়া হচ্ছিল। স্পট বুকিংয়ে শিক্ষার্থীদের ছিল নগদ ছাড় ও উপহার। এই ছাড় ও উপহারের সুযোগ নিয়ে ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ২০১৭ এডিশনের জন্য বুকিং দেই। এর তিনদিন পর মিরপুরে ইয়ামাহার ডিলার পয়েন্ট থেকে বাইক ডেলিভারি নেই।

২০১০ সালে সারা দেশে হাতে গোনা কয়েকটা বর্ডার ক্রস ইয়ামাহা ফেজার বাইক আসে। তখন আমার এক বন্ধুর নীল রঙের একটি ফেজার কেনে। সেটি চালানোর সুযোগ হয়েছিল। এর গতি এবং নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্দান্ত। ২০১৭ তে এসে নেকেড ভার্সন ছেড়ে আমার মন মজে ফেয়ার বাইকে।

ফেজারের ডাবল হেডলাইটগুলোকে দেখলে মনে হয়, আমায় বলছে, 'তুমি এই চোখে তাকিও না লুটপাট হয়ে যাবে।'

আসলেই আমি লুটপাট হয়ে গেছি। ২০১৩ সালে আরেক বন্ধু ফেজার ভার্সন ২ কিনেছিল। ড্রাইভিংয়ে শিক্ষানবীশ থাকায় তার বাইকটি চালিয়েছিলাম মাস খানেক। তখন এত দামি বাইক কেনার কথা চিন্তাই করতে পারতাম না। কেননা, বাইকের পেছনে এতটাকা খরচ করাটাকে আমার কাছে বিলাসিতা বলে মনে হত। কিন্তু নতুন বাইক কেনার পর ওটার পিঠে চড়ে থ্রটলে হাত রেখে বুঝলাম ভালো জিনিসের দাম কিছুটা বেশিই হয়। নতুন বাইকের সঙ্গে পথচলা শুরু হলো।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :