মনিরের ফুটানো পানির প্রাণ জুড়ানো শরবত

আসাদুজ্জামান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:২২ | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:০৬

নগরের পথে-ঘাটে দেদারসে বিক্রি হয় শরবত। এই শরবতের অন্যতম ‍উপাদান পানি। কিন্তু এই পানি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয় তা জানেন না অনেকেই। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ কি না তাও খতিয়ে দেখার খুব একটা সুযোগ মেলে না। কিন্তু আপনি যদি জানেন শরবতের পানি ফুটানো, তবে তা নির্দ্বিধায় তা পান করতে পারেন।

এমনি এক শরবত বিক্রেতা মনির হোসেন। রাজধানীর কদমতলী থানার শ্যামপুরে ১২ বছর ধরে পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে তা দিয়ে শরবত তৈরি করে পথচারী ও এলাকাবাসীদের মনে আস্থা অর্জন করেছেন তিনি।

এলাকার নতুন আলী বহরের প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তার ধারে মনিরের শরবতের দোকান। দোকান ঠিক বলা চলে না। কেননা, ফুটপাতে একটি চৌকিতে শরবতের উপকরণ সাজিয়েছেন তিনি। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। তার প্রধান ক্রেতা ওই প্রাতঃভ্রমণকারী ও শিল্প এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকরা।

মনির হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ’১২ বছর ধইরা শরবত বানাইয়া বেঁচি। আগে আইজি গেট এলাকায় ১০ বছর বেঁচতাম। ওখানে মোর শরবত অনেকেই খাইতো। ওখানে এহন বড় ভাইকে শবরত নিয়া বহাইছি। এখন মুই এইহানে শরবত বেঁচি এক দেড় বছর হইলো।’

ফুটানো পানি দিয়ে কেন শরবত বানান? এমন প্রশ্নের জবাবে মনির বলেন, ‘ট্যাপের পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা থাকে। এই পানি দিয়ে বানান্নাই শরবত খাইলে প্যাটের সমস্যা হইতো পারে। মানুষ খাইবো উপকারের লইগ্যা। যেইটা খাইয়া যদি ক্ষতি হয়, তয় কির লইগ্গা খাইবো। এইর লইগ্গাই পানি ফুডাইয়া ঠান্ডা কইরা শরবত বানাই।’

সকাল পাঁচটায় এসে নয়টা পর্যন্ত শরবত বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ গ্লাস শরবত বিক্রি করেন।

মনির জানান, তার কাছে তিন ধরনের শরবত আগে। এগুলো হলো বেলের শরবত, উলট কম্বলের শরবত আর ঘৃতকুমার দিয়ে ইসুবগুল, তোকমা ও তালমাখানার শরবত। প্রতি গ্লাস স্পেশাল শরবতের দাম ২০ টাকা। নরমাল শরবত মেলে ১৫ ও ১০ টাকায়।

প্রতিদিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণের বের হন নতুন আলী বহরের পৌঢ় ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে মনিরের শরবত খাই। কারণ, সে বলছে তার শরবতের পানি বিশুদ্ধ। তার উপর আস্থা আছে। শরবত এই এলাকায় অনেকেই বিক্রি করেন। কিন্তু তাদেরটার চেয়ে মনিরের শরবত বেশ ঘন। খেতেও ভালো।’

একই কথা জানালেন স্থানীয় একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক সরাফতও। তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে কারখানার ঢোকার আগে তিনি ১০ টাকা দিয়ে মনিরের তৈরি ঘৃতকুমারের শরবত খান। এতে নাকি তার পেট ঠান্ডা থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর হয়।’

সকালে শরবত বিক্রি শেষ হলে মেসে ফেরেন। দিনের বাকিটা সময় শরবতের জন্য পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করেন। পানির সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে সিরাপ তৈরি করেন নেন। বাজার থেকে কিনে আনেন গুড়, ঘৃতকুমার ও ইসুবগুল, তোকমা ও তালমার দানা। এসব করতেই তার দিন কেটে যায়।

মনির বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখি। শরবত বেঁচা শেষ হইলে ঘরে গিয়ে বালতি, জগ গ্লাস সাবানের গুড়া দিয়ে ভালোভাবে ধুইয়া রোদে শুকাই।’

মনিরের কথার সত্যতাও মিললো। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে তিনি শরবত তৈরি ও পরিবেশন করেন। শরবতের উপকরণগুলো একটি বালতিতে রাখা। যেটাতে ঢাকনা দেয়া। ক্রেতার জন্য শরবত তৈরি করেন একটি জগে। গ্লাস ও মগে পরিবেশনের আগে সেটি দুইটি বালতিতে রাখা পানিতে দুইবার ধুয়ে নেন। বালতির পানি একটু নোংরা হলেই তা পরিবর্তন করেন। এই পানি আনেন স্থানীয় একটি হোটেল থেকে। আর শরবতের জন্য যেই পানি ব্যবহার করা হয় সেটি তো ফুটানোই।

মনিরের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুরে ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে। এক যুগ আগে শহরে আসার আগে গ্রামে কৃষিকাজ করতেন।

প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শরবতের সব উপকরণ নিয়ে আলী বহরে এসে হাজির হন। বেঁচে বিক্রি শেষ হলে মেসে ফেরেন। যেখানে তার সঙ্গে থাকেন বড় ভাই ও বড় ছেলে। ছেলে বংশালে একটি দোকানে কাজ করে। অভাবের তাড়নায় তাকে পড়াতে পারেননি। এ নিয়ে মনিরের মনে আক্ষেপও রয়েছে। কিন্তু ছোট ছেলের বেলায় আয়োজনের কমতি রাখেননি। গ্রামে স্ত্রীর কাছে থাকে ছোট ছেলে। তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। এখন সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতেই চাইলে এই শরবত বিক্রেতা বলেন, ‘ইচ্ছা আছে এট্টা শরবতের দোকান দিমু। কিছু টাহাও জমাইছি।’

(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/এজেড/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :