‘নারীকে একটা আলাদা শক্তি দিয়ে রেখেছে আল্লাহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৫

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ পেয়েছেন তিনি। যেটাকে ব্যবসায়ের নোবেল পুরস্কার বলেন অনেকে। নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ এশীয় মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম, যিনি এ পুরস্কার পেলেন। তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। সেলিমা আহমাদ ব্যবসায়ে যেমন সফল তেমনি পারিবারিক জীবনেও। এ সফল নারী উদ্যোক্তার সফল হয়ে ওঠা এবং নারী উন্নয়নে তার ভাবনা ও উদ্যোগের কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জহির রায়হান। ছবি তুলেছেন শেখ সাইফ

ঢাকাটাইমস: নারী উদ্যোক্তাদের মূলধারার ব্যবসায় নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখেন আপনি। ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কী?

সেলিমা আহমাদ: আমি নিজে কিন্তু মূলধারায় ব্যবসা করছি। পড়াশোনা করেছি ব্যবস্থাপনা বিভাগে। জড়িত আছি গাড়ির ব্যবসায়। আমি একজন রপ্তানিকারকও। আমি একটা জিনিস মনে করি, নারী বা পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ক্ষমতার দিক দিয়ে ক্ষমতায়ন না হওয়ার কারণে নারীদের ক্ষমতা নেই। একজন পুরুষ যে সুযোগ পায় নারী সে সুযোগ পায় না। একজন পুরুষ যে সম্পত্তি পায়, নারী তা পায় না। নারীরা পৈতৃক সম্পত্তির অংশ নিতে গেলে কখনো কখনো ভাইয়েরা বা মায়ের বাড়ির আত্মীয়রাও কিন্তু দেয় না। তারা ওই জায়গাটা থেকে বঞ্চিত। মূলধারায় যাওয়ার জন্য সমসুযোগের জোগান লাগে। এ জোগান না থাকাতেই আমরা অনেক সময় মূলধারায় নারীদের দেখতে পারছি না।

এখন আমি অনেকটা সময় গ্রামে গিয়ে থাকি। সেখানে এখন নারীকে দেখি চায়ের স্টলে চা বিক্রি করছে। আমার কাছে এটা খুব ভালো লাগে। এটা এখন শহরেও কিন্তু চলে আসছে। অনেক কাজ আছে যেটা আগে শুধু পুরুষরা করত, সেটা এখন নারীরাও করছে। ব্যবসায় আরও বেশি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের নারী সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা যত বেশি নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারব তত বেশি নারী ব্যবসায় আসবে। আর তাতে শেষ পর্যন্ত ফলটা পাবে দেশই।

ঢাকাটাইমস: বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চেম্বার থেকে কী করছেন?

সেলিমা আহমাদ: আমাদের চেম্বার থেকে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা সরকারিভাবে প্রণয়নের চেষ্টা করছি। এ নীতিমালার প্রয়োজন আছে। একটা অ্যাকশন প্লান দরকার আছে। আগামী পাঁচ বছরে কী করা হবে। বিশেষ করে আমাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সংযুক্ত করে আমাদের নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের নীতিমালার প্রয়োজন আছে। নারী উন্নয়নে নীতিমালা আছে, কিন্তু নারী উদ্যোক্তার উন্নয়ন নীতিমালা নেই। এই জায়গাটা আমরা প্রণয়ন করতে চাচ্ছি। আমাদের এসডিজির সঙ্গে লিংক করে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

আমরা এ বছর বিভিন্ন জেলায় অফিস নিয়েছি। আমাদের মেম্বারদের দক্ষতা উন্নয়ন, তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ২০১৮ সালে পরিকল্পনা করব। ২০১৮ সালে নীতিমালা তৈরি করব। বিভিন্ন সভা-সেমিনার করব। আমাদের উইমেন চেম্বারের মেম্বার এখন পাঁচ হাজার।

ঢাকাটাইমস: আপনি কৃত্রিম ফুল রপ্তানির ব্যবসা প্রথম দেশে শুরু করেছিলেন। ব্যতিক্রমী এই ধারণা কীভাবে পেয়েছিলেন?

সেলিমা আহমাদ: আসলে আমি গ্রামের নারীদের কাজ দিতে চেয়েছিলাম। নারীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল সব সময়। আমাদের গাড়ির ব্যবসা শুরুর সময় এত চাকরি দেয়ার সুযোগ ছিল না। আমি মালিক হিসেবে আমার ডিলিংসটা অন্য রকম ছিল, ক্রেতারাও অন্যভাবে দেখত। সবকিছুর একটা সময়ের ব্যাপার থাকে। অসময় করলে সেটার ভালো ফল আসে না। আমি আমাদের দিয়ে উপলব্ধি করি, নারীদের একটা আলাদা শক্তি দিয়ে রেখেছে আল্লাহ। সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি।

ঢাকাটাইমস: নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি নীতিসহায়তা কতটুকু অনুকূল?

সেলিমা আহমাদ: দেশে বিদ্যমান নীতিসহায়তা নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট অনুকূল বলতে পারি। সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও বিনা সুদে ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শুল্ক রেয়াতসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ তৈরি করেছে। এসব সুযোগ নিয়ে অনেকেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন সফলভাবে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের লোকজন নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন। এতে একজন নারীর দক্ষতা বাড়ছে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা সহজ করতে নারীদের জন্য সহজ গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা, একজন পুরুষ যেভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শিল্প স্থাপন করছেন, নারীর ক্ষেত্রেও সমদৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ, নারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা আরো নিশ্চিত করা।

ঢাকাটাইমস: কোনো নারী যদি ব্যবসায় আসতে চান, তার জন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

সেলিমা আহমাদ: ব্যবসায় সফল হতে গেলে তাকে নিজের পণ্যের বাজার ব্যবস্থাটা ভালো করে বুঝতে হবে। ব্যবসাটার আদ্যোপান্ত বুঝেই এগোতে হবে। মোট কথা পর্যাপ্ত তথ্য তার কাছে থাকতে হবে। ঝুঁকি নেয়ার মতো সক্ষমতা তার আছে কি না সেটাও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নারী যেহেতু তার উৎপাদিত পণ্যটি দূর-দূরান্তে নিয়ে যেতে পারেন না, তাই বাজার ব্যবস্থাটা নিকটবর্তী হলে তার জন্য সহজ হবে।

ঢাকাটাইমস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সেলিমা আহমাদ: আপনাকে এবং ঢাকাটাইমস পরিবারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :