পুলিশের ভুলের সমালোচনা করুন, গালিগালাজ করবেন না প্লিজ!
২৫/০৭/২০১৮ তারিখ সকাল ১০টায় এএসআই অলিউর যাত্রাবাড়ী থানায় ফোন করে জানান, স্থানীয় কিছু লোক অসুস্থ এক ব্যক্তিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন। একজন রিকশাযোগে যাওয়ার পথে অলিউরকে দেখে জানান, একজন বৃদ্ধ লোক মারা যাচ্ছেন। এএসআই অলিউর সঙ্গে সঙ্গে স্পটে যেয়ে দেখেন বয়স্ক লোকটি মারা গেছেন। প্রায় ১০-১৫ জন লোক দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেই ভিডিও করছিলেন, ছবি নিচ্ছিলেন!
অলিউর মৃতদেহ দেখার পরপর যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসারকে জানালে ডিউটি অফিসার সবচেয়ে নিকটস্থ এসআই নজরুলকে ফোন করে জানান। উল্লেখ্য কোনো জায়গা থেকে মৃতদেহ সরিয়ে আনতে গেলে পুলিশকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে নিয়ে আসতে হয়! হত্যা, স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক যে কোনো মৃত্যুতেই পুলিশকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে তারপর লাশ স্থানান্তর করতে হয়! এটি করা হয় মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তার একটি প্রাথমিক গাইডলাইন পেতে। এই সুরতহাল প্রতিবেদন আইন অনুসারে এসআই পদমর্যাদার নিচে কাউকে দিয়ে করানো যায় না!
এসআই নজরুল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে আঞ্জুমান মফিদুলে ফোন করেন। কোনো মৃতদেহের পরিচয় পাওয়া না গেলে তাকে আঞ্জুমান মফিদুলে প্রেরণ করা হয় সেটা আমরা সবাই আশা করি জানি! মৃত বৃদ্ধ চাচাকে প্রায়শই ওয়ারী বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখা যেত। অনেকেই বলতো অনেকদিন ধরে থাকেন ওয়ারী বিভাগ এলাকায়। আত্মীয় স্বজন কাউকে চেনে না কেউই, তিনি নিজেও বলতেন না। এসআই নজরুল ইতোমধ্যে ৩ বার আঞ্জুমান মফিদুলে ফোন করেন গাড়ির অবস্থান জানার জন্য। সেখান থেকে গাড়ি আসে প্রায় সকাল ১১:৪৫ মিনিটে। যাত্রাবাড়ী থানা থেকে মৃতদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে প্রেরণ করা হয় দুপুর ১২ টায়। ব্যবধান ১৫ মিনিট।
আসুন এবার দেখি পুলিশের করণীয় কি ছিল?
১) যেখানে ডেডবডি সেখানে রেসপন্স করা, যেটি এএসআই অলিউর করেছেন এবং তিনি ও তার কনস্টেবল যেহেতু সুরতহাল প্রতিবেদন করতে পারবেন না, তারা সাথে সাথে যাত্রাবাড়ী থানায় ডিউটি অফিসারকে ফোন করে দ্রুত একজন এসআই'কে পাঠাতে বলেন।
২) ডিউটি অফিসার লোকেশনের সবচেয়ে কাছের এসআই নজরুলকে জানান, তিনি পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করেন নিখুঁতভাবে। মৃতদেহ আঞ্জুমানে প্রেরণ করে সাথে সাথে চলে যান গাড়ি দুর্ঘটনার একটি বিষয় এ্যাটেন্ড করতে!
এই ঘটনাকে পুলিশের পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে কতটুকু ঘাটতি আছে বা থাকে তা বিচার করার ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম!
এবার আসুন সচেতন নাগরিক হিসেবে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের করণীয় কি ছিল?
১) নিকটস্থ পুলিশকে জানানো যেটি একজন সচেতন নাগরিক রিকশায় যাওয়ার পথে বলে গেছেন; তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
২) দ্বিতীয়ত অনেক ভাইয়েরা অসুস্থ অবস্থায় বৃদ্ধ চাচাকে কাঁতড়াতে দেখছিলেন তারা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতেন! ১৫ জন লোকতো কম নন। ওখানে পারভেজের মতো একজন মানবিক মানুষের অভাব ছিল সম্ভবত!
৩) অনেকে ভিডিও করেছেন, শেয়ার করেছেন কিন্তু ওখান থেকে কেউ একজনও পুলিশকে তথ্য প্রদান করেননি! পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বৃদ্ধ চাচা মারা গেলেন। অথচ ০৩ মিনিট দূরত্বেই একটি চিকিৎসালয় ছিল। জীবন বাঁচানোর চেয়ে ছবি তোলা ও ভিডিও করা অতীব জরুরি ছিল আমাদের কাছে!!
ঘটনা পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে একের পর এক পোস্ট আসতে থাকে ফেসবুকে আমার মেসেজ বক্সে! আমি অবাক হয়ে দেখলাম দুই একজন সম্মানিত নাগরিক পুলিশকে দোষারোপ করে বড় বড় পোস্ট লিখে ফেসবুকে শেয়ার করেন এবং তা শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক আহবান জানান! অনেকেই শেয়ার করেছেন, পুলিশকে যাচ্ছেতাই বলে গালি দিয়েছেন! ঘটনার পুরোটা না জেনে এরকম বিভ্রান্তি যারা ছড়িয়ে দেন তাদেরকে কি বলা উচিত?!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ফেইম সিকিং পোস্ট নিয়ে আমার এক তীব্র ভয় কাজ করে! কেউ কেউ মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে এক ধরনের দুর্লভ মজা পান সম্ভবত! এতে পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করা পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়েন! কষ্টবোধও হয়, নাকি পুলিশের কষ্টও পেতে নেই।
একটি সনির্বন্ধ অনুরোধ, দয়া করে পুলিশের ভুল নিয়ে সমালোচনা করুন তবে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার পর ধন্যবাদ না দিতে পারেন, গালিগালাজ করবেন না প্লিজ! আমাদেরও পরিবার রয়েছে। পেশাদারিত্বের জবাব কখনোই গালি হতে পারে না। ধনাত্মক কাজকে অনুপ্রাণিত করলে ধনাত্মক কাজের পরিধি বাড়তেই থাকে। এটুকু তো আশা করাই যায়, তাই না?
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)