মহারাষ্ট্রে পাঠ্যবই থেকে মুছে ফেলা হয়েছে মুঘল ইতিহাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ০৯:১৯

ভারতের বিখ্যাত 'মুঘলসরাই' রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের পর এবার মহারাষ্ট্রে স্কুলের পাঠ্যবই থেকেও মুঘল আমলের ইতিহাস অনেকটাই মুছে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপিশাসিত ওই রাজ্যে সপ্তম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখন থেকে মুঘল ইতিহাসের বদলে মারাঠা বীর শিবাজী মহারাজের কাহিনী পড়বে। বিরোধী দলগুলো মনে করছে, এটা ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘল শাসনের পর্বটাই মুছে দেওয়ার চেষ্টা।

যদিও বিজেপি এর মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছে না। বরং মুঘল শাসনেররও আগে ভারতের যে 'গৌরবের ইতিহাস' আছে, পাঠ্যবইতে সেটার ওপরই জোর দেওয়ার কথা বলছে তারা।

ভারতীয় রেলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে মুঘলসরাই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন। এশিয়ার সবচেয়ে বড় রেল ইয়ার্ডও আছে এখানে। দিল্লি-কলকাতা রুটের মাঝপথে এই স্টেশনটির নাম বদলে বিজেপির তাত্ত্বিক গুরু দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে সে কথা প্রকাশ্যে আসার পর পার্লামেন্টে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন বিরোধী সদস্যরা।

সেই বিতর্কের রেশ না কাটতেই মহারাষ্ট্রের স্কুল শিক্ষা পর্ষদ তাদের ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে মুঘল জমানার অধ্যায় প্রায় পুরোটাই বাদ দিয়ে দিয়েছে। সেই জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কংগ্রেস জমানার বফর্স কেলেঙ্কারি, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা এবং আরও বেশি করে শিবাজী মহারাজের বীরগাথা।

কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের মতে, এগুলো ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোণঠাসা করার ন্যারেটিভেরই অংশ। আফশোস এখানেই, মুঘলসরাই স্টেশন ভারতের ইতিহাসের একটা অংশ। কিন্তু এখন এরা বলার চেষ্টা করছেন, মুসলিমরা আসলে ভারতীয়ই ছিলেন না। সেই আমলে আমরা ছিলাম গোলাম, আর সেই ইতিহাসই এরা পাল্টাতে চান। ভারতীয় মুসলিমদের বিজাতীয় প্রমাণ করার যে যুদ্ধে তারা নেমেছেন, এগুলো তারই হাতিয়ার।

বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, মুঘল জমানার ইতিহাস ভারতের আসল ইতিহাসই নয়। বাবর-আকবর-হুমায়ুন এ দেশের নয়। তারা আক্রমণকারী, বাইরে থেকে এসে এ দেশ শাসন করেছে। তো সেই মুঘল ইতিহাস বা ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতার ইতিহাস যদি পড়ানো হবে, মুঘলদের আগের ইতিহাস কেন পড়ানো হবে না? কেন শুধু আমরা গত সাতশো বছরেই আটকে থাকব? আমার প্রশ্ন হল, ভারত তো শুধু সাতশো বছরের দেশ নয়, অনেক প্রাচীন দেশ। আজকের বহু সভ্য দেশ যখন অসভ্য ছিল, তখন থেকেই এখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা চলছে। সুতরাং আমরা মনে করি ভারতবাসী যদি পূর্বপুরুষদের সেই গৌরবের ইতিহাস জানতে পারে, দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

কংগ্রেস আমলেও দিল্লির বিখ্যাত কনট প্লেসের নাম বদলে রাখা হয়েছিল রাজীব চক। সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রাহুল সিনহা বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের নাম বদলে ভারতীয় লোকের নামে রাখলে যদি অসুবিধা না থাকে, তাহলে মুঘল আমলের নাম বদলালে অসুবিধা কোথায়? ব্রিটিশদের নাম ফেলে দিতে কোনও অসুবিধা নেই, কারণ ইংরেজের নামে এ দেশে কোনও ভোট নেই। কিন্তু মুঘলদের নাম ফেলতে গেলেই ত্রাহি-ত্রাহি রব উঠবে, কারণ তখন ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে একটা সম্প্রদায়ের ভোট আদায় করা যাবে না।’

ইতিহাস বলে, ভারত প্রায় ৭৬৬ বছর মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। একুশ শতকের ভারতে এখন সেই পর্বটাকেই ম্লান করে দেওয়ার সচেতন চেষ্টা চলছে। আর স্পষ্টতই তার পেছনে আছে ধর্মীয় রাজনীতির অঙ্ক।

(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/জেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :