বিজিবির উন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:১২ | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:১৭

সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির উন্নয়নে নানা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মজবুত, দিনে দিতে তা আরও ভালো হচ্ছে এবং বিজিবিকেও ভবিষ্যতে আরও বেশি সুযোগ ‍সুবিধা দেয়া হবে।

পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে দুটি হেলিকপ্টার দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সহজে যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রিং রোড তৈরির উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি।

বিজিবি দিবস-২০১৭ উপলক্ষে বুধবার সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে দেয়া বক্তব্য এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকালে প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় পৌঁছে বিজিবির কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। পরে তিনি একটি খোলা জিপে করে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিবিজির বিভিন্ন সদস্যদের পদকও তুলে দেন তিনি।

এরপর বিজিবি সদস্যদের ‍উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিজিবির আধুনিকায়নে তার সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যা যা দরকার আরও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির জন্য আমরা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। দুর্গম এলাকা এবং পাহাড়ি এলাকায় দ্রুত পৌঁছার জন্য হেলিকপ্টারের প্রয়োজন আছে এবং আমরা তা ক্রয় করার ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এ সময় বিজিবির জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ বাহিনীটির জন্য নানা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

ব্রিটিশ আমলে ১৯৭৫ সালের ২৯ জুন রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ান নামে ৪৪৮ সদস্যের যে ইউনিট প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কালের পরিক্রমায় সেটিই পরে ১৮৬১ সালে ফ্রন্টিয়ার্স গার্ডস গঠন করা হয়। ১৮৭৯ সালে পিলখানায় ঘাঁটি স্থাপন করা হয় এই বাহিনীর। পরে এই বাহিনীর না ১৮৯১ সালে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ এবং ১৯২০ সালে হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস। এ সময় তাদেরকে নিয়োগ করা হয় সীমান্ত রক্ষায়। ভারত ভাগের পর পাকিস্তান আমল বাহিনীর নাম পাল্টে হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাহিনী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাহিনীর নাম হয় বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর। ২০০৯ সালে পিলখানায় বিদ্রোহের পর বাহিনীর পুনর্গঠনের পর নাম পাল্টে হয় বর্ডার গার্ডস অব বাংলাদেশ বা বিজিবি।

সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের ভেতরেও আইনশৃঙ্খলা এবং সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তায় বিজিবির ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের গাড়িতে আগুন দেয়া এবং এ ধরনের নানা ঘটনা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে কাজ করেছে বাহিনীটি। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়েও বাহিনীটির ভূমিকা ছিল বলিষ্ঠ।

রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্তে যখন উত্তেজনা, কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধপল্লীতে আগুন এবং পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশের সময় বিজিবির ভূমিকারও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজিবি সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পেশাদারিত্ব তৈরি এবং সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’

ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ অংশ সর্বমোট তিন হাজার ১৬৭ কিলোমিটার রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তে প্রায়ই সমস্যার কারণে সেখানে বিজিবির নতুন রিজিওন গঠনসহ অতিরিক্ত ২৫ প্লাটুন জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিজিবির অবকাঠামো বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনবলের কাঠামো আট হাজার ৬৬২ জন বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৪ হাজার থেকে বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার। সীমান্তে সক্ষমতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে বিজিবিতে সদস্য সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি লোক নিয়োগ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকার বিজিবিকে কোম্পানি পর্যায়ে একটি করে যানবাহনের প্রাধিকার দিয়েছে, ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ অনুমোদন করা হয়েছে, দ্রুত চলাচলের লক্ষ্যে এক হাজার ৪০০ মোটর সাইকেল সরবরাহ করা হয়েছে।

এ ছাড়া অধিক দূরত্বের বিওপির মধ্যবর্তী স্থানে ১২৮টি বর্ডার সার্কিট হাউজ নির্মাণ, আরও ১২৪টি নির্মাণের কার্যক্রম চালু থাকা, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পার্বত্য এলাকায় ৪৭৯ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারায় দুটি সেক্টর এবং পাঁচটি ব্যাটালিয়ান ও ৯২টি বিওপি স্থাপন করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় ভাসমান বিওপি নির্মাণ করে দুর্গম এলাকা রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

‘যেখানে বিদ্যুৎ লাইন সেই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে আমরা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের সরকার সীমান্ত ভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছে। বার্ষিক অর্জিত ছুটি দুই মাস করার আবেদনও অনুমোদন হয়েছে এবং এই দুই মাসের অগ্রিম বেতন দেয়া হচ্ছে। বিজিবির জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। পারিবারিক পেনশন ৬০ ভাগ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর বিজিবি সদস্যরা তাদের নানা উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের লড়াই তুলে ধরেন।

এতে ভারত ও মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :