আর্টিজান হামলার শেষ পলাতক আসামি শরিফুলও গ্রেপ্তার
হলি আর্টিজান হামলার আসামি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া শরিফুল ইসলাম খালিদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষনেতা বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
শরিফুল আরো কিছু নামে পরিচিত। যেমন, রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলাইমান।
র্যাব-১ ও ৫ এর একটি যৌথদল এই জঙ্গিনেতাকে গ্রেপ্তার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থেকে। এর মধ্য দিয়ে আর্টিজান হামলা মামলার সব আসামি গ্রেপ্তার হলেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনায় আট জনকে আসামি করে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন আগে থেকেই আটক ছিলেন। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই জন যাদের মধ্যে সব শেষ ধরা পড়লেন শরিফুল।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, শরিফুল ছিলেন গুলশান হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। তিনি প্রত্যক্ষভাবে অর্থায়ন সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজেও জড়িত ছিলেন। হলি আর্টিজান হামলার আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধার সাঘাটায় একটি আস্থানায় সারোয়ার জাহান, তামীম এবং শরিফুলসহ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিনেতারা বৈঠক করেন।
শুক্রবার গ্রেপ্তারের বিষয়ে শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।
অধ্যাপক রেজাউলের খুনিও শরিফুল
র্যাব জানায়, অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল ইসলাম। তিনি রেজাউল করিমকে হত্যার এক মাস আগ থেকে তার ওপর নজর রেখেছিলেন।
এই হত্যা মামলায় শরিফুলের ফাঁসির আদেশ এসেছে বিচারিক আদালত থেকে।
এই জঙ্গিনেতা র্যাবকে জানান, তার সংগঠনের আমির ও সংগঠনের সিদ্ধান্তে অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে ‘রেকি’ ও ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ, অবস্থান গতিবিধি ইত্যাদি নজরদারি করা হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিল শরিফুল ইসলাম।
মুফতি মাহমুদ জানান, স্থানীয় জঙ্গি রিপন আলী ওরফে রকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের ক্লাসের রুটিন মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে শরিফুলকে দিয়েছিলেন। রেজাউলকে হত্যায় ব্যবহৃত মোটর সাইকেল সংগ্রহ করেন জঙ্গি ওসমান মিলু ও মাসকাওয়াত ওরফে আব্দুল্লাহ। শরিফুলের নেতৃত্বেই এই হত্যা হয়।
হত্যা শেষে হাসান ওরফে বাইক হাসান মোটরসাইকেলে করে শরিফুল ও খাইরুল ইসলাম ওরফে পায়েলকে নিয়ে রওনা দেন। পায়েলের কাছে চাপাতি ও রক্তমাখা জামাকাপড় ছিল। তাকে খরখড়ি বাইপাসে নামানোর পর হাসান তার নাটোরের ভাড়া করা বাসায় শরিফুলকে নিয়ে ওঠেন। পরদিন সকালে শরিফুল ঢাকায় চলে আসেন এবং আমিরের নির্দেশে ভারতে পালিয়ে যান।
শরিফুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়, ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ ফাইভ পান। এরপর ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় আহসান হাবিব ওরফে শোভনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যুক্ত হন তিনি। প্রথমত. তিনি শোভনের মাধ্যমে রাজশাহীকেন্দ্রীক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরতদের উগ্রবাদী গ্রুপে যোগ দেন। তারা অনলাইন ভিত্তিক উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করতেন। পরে শোভনের মাধ্যমে রাজশাহীতে শোভনের মেসে জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় শরিফুলের।
এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ বলেন, অধ্যাপক রেজাউলের সঙ্গে শরিফুলের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না, শুধুমাত্র আমির ও সাংগঠনিকভাবে ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়।
শরিফুল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরের দিকে তিনি আত্মগোপনে থেকেই জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকেন।