বৈশাখে বাড়ে তাদের কদর

সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০১৯, ০৮:২২

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। চাহিদা বেড়েছে বাঁশ-বেতের তৈরি টুকরি, উড়া, কুলা, কাদি, ডোল, জাকি ও চালনিসহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামেরও। বাজারে কৃষিপণ্যের হাটগুলোতে তাই বসছে এসব পণ্যের বিশাল সমাহার। চাহিদা অনুসারে সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।

এক সময় প্রতিটি পরিবারে বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ছিল। ছিল এর সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিক ও কারিগরদের ব্যস্ততাও। কিন্তু দিন দিন এর স্থান দখলে নিয়েছে সহজলভ্য প্লাস্টিক পণ্য। বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে ও দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক শিল্পের প্রসারে এই কুটিরশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।

তবে বৈশাখ মাসে ধান কাটার সময় এলে বাঁশ-বেত শিল্প ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত অন্য সব ধরনের পণ্যের কদর বেড়ে যায়। তাই সারা বছর অলস বসে কাটালেও বিক্রেতা ও কারিগরদের ওইসব কৃষিপণ্য তৈরি ও বিক্রির ব্যস্ততা বাড়ে। এই সময়টায় আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হন তারা।

সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখ মাসের শুরু থেকে ক্রেতাদের সমাগমে যেন মেলায় পরিণত হয়েছে বাজারগুলো। অথচ সারা বছর সুনসান নীরবতা।

তারা জানান, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ধান-চাল নেওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক পণ্য টুকরি, উড়া, ডোলসহ বাঁশের ঝুঁড়িগুলোর। ধান শুকানোর চাঁচ, কাগজের পাল, ধান রাখার ক্ষুদ্র গোলা (ডোল), ধান কাটার কাচি ইত্যাদিও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।

ক্রেতাদের অভিযোগ, অনেক বিক্রেতা এসব পণ্যগুলোর দাম তুলনাম‚লকভাবে বেশি নিচ্ছেন। সবকিছুতেই এখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করেন। বৈশাখ মাস ঘিরে কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ীরাও একইভাবে গলাকাটা দাম নিচ্ছেন।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারে আসা সোহেল মিয়া বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দাম বাজারে। কিন্তু কিছুই করার নেই। মাঠের ধান ঘরে তুলতে এসব পণ্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। তাই বেশি দামেই নিতে হচ্ছে।

বিশ্বম্ভপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা গ্রামের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, ‘বৈশাখ মাসে ধান ঘরে তুলতে বাঁশ-বেতের জিনিসগুলো খুবই উপকারী। প্লাস্টিকে তৈরি এসব পণ্য পাওয়া যাবে না। তাই এসব কিনতে এসেছি বাজারে। তবে দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।’

অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা বলছেন, সারা বছর চাহিদা কম থাকায় এসব পণ্য উৎপাদনে জড়িত অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে উৎপাদনকারীদের কাছ থেকেই বেশি দামে কিনে বিক্রিও করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে। না হলে লাভ হবে না।

আর পণ্য উৎপাদনকারী কারিগরদের দাবি, এখন বাঁশ ও বেত কম পাওয়া যায়। দামও অনেক বেশি হওয়ায় এসব পণ্য তৈরিতে খরচও হচ্ছে বেশি। আগে একজন শ্রমিককে দৈনিক ২০০-৩০০ টাকা মজুরি দিতে হলেও এখন ৫০০-৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে, তাও পাওয়া যায় না।

তারা আরও বলছেন, ‘সরকার কোনো ধরনের সহযোগিতা না দেওয়ায় আমরা কষ্টে আছি। ফলে এই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে।’

সরকারিভাবে বাঁশ-বেত উৎপাদনে ও এ শিল্পে জড়িতদের সহায়তা করলে এটি টিকে থাকার পাশাপাশি আরও সম্প্রসারিত হয়ে কৃষকসহ গ্রামীণ মানুষের কাজে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/০১মে/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :