যে কারণে পালিয়েছেন দুবাই শাসকের স্ত্রী

বিশ্বের বিলাসবহুল নগরীর অন্যতম একটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। সেখানের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমকে ফেলে দুই সন্তানকে নিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন তার স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া। মোহাম্মদ বিন রশিদ দুবাইয়ের শাসকের পাশপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
ব্রিটিশ একটি ট্যাবলয়েড জানিয়েছে, দুবাইয়ের শাসককে ফেলে ছেলে জায়েদ ও মেয়ে আল জলিলাকে নিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেন প্রিন্সেস হায়া। তিনি সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। তার সঙ্গে রয়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড। তা দিয়ে সেখানে তিনি নতুন জীবন পরিচালনা করতে চাইছেন।
সম্প্রতি এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এবার স্বামী ও রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে আসার কারণ জানিয়েছেন প্রিন্সেস হায়া। তিনি জানিয়েছেন জীবনের ভয়েই দুবাই থেকে পালিয়েছেন তিনি।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে যে প্রিন্সেস হায়া সম্প্রতি তার স্বামীর এক কন্যা শেখ লতিফার দুবাই থেকে পালিয়ে আবার রহস্যজনক ফিরে আসার পেছনে কিছু বিষয় জেনে যান।
শেখ লতিফা এক ফরাসি নাগরিকের সহায়তায় সাগর পথে পালিয়েছিলেন কিন্তু ভারতীয় উপকূলে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি তাদের বাধা দেয় ও পরে দুবাইতে ফিরিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় দুবাইয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রিন্সেস হায়া তখন সেসময় আইরিশ প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
দুবাই কর্তৃপক্ষ বলছে যে শেখ লতিফা এখন দুবাইতে নিরাপদে আছেন, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে তাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর প্রিন্সেস হায়া সত্যি কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এ নিয়ে তার স্বামীর পরিবার থেকে চাপ আসতে থাকে।
এক পর্যায়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। একটি সূত্র জানায় তিনিও অপহরণের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। যদিও লন্ডনে সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি। তারা বিষয়টিকে একজনের ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে একজন নারীকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দায়ী করে কয়েকটি কবিতা পোস্ট করেছেন। মনে করা হচ্ছে প্রিন্সেস হায়াকে উদ্দেশ্য করেই এসব কবিতা পোস্ট করেছেন তিনি।
জর্ডানি বংশোদ্ভূত এবং ব্রিটেনে লেখাপড়া শেখা ৪৫ বছর বয়সী প্রিন্সেস হায়া ২০০৪ সালে শেখ মোহাম্মেদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রিন্সেস হায়া ছিলেন শেখ মোহাম্মেদের ষষ্ঠ ও কনিষ্ঠ স্ত্রী।বিভিন্ন স্ত্রীর ঘরে দুবাইয়ের এই শাসকের ২৩টি সন্তান রয়েছে।
প্রিন্সেস হায়া প্রথমে জার্মানি গিয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে। এখন তিনি বাস করছেন লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেস গার্ডেনসের একটি টাউন হাউজে যার মূল্য প্রায় ১০৭ মিলিয়ন ডলার। তিনি এখন আদালতে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এখন তিনি যুক্তরাজ্যেই বসবাস করতে চান। তবে যদি তার স্বামী তাকে ফেরানোর কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন তাহলে এটা ব্রিটেনের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার বিষয় হবে। আরব আমিরাত যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ।
ঘটনাটি জর্ডানের জন্যও বিব্রতকর কারণ প্রিন্সেস হায়া জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর সৎ বোন। আবার জর্ডানের বিপুল সংখ্যক নাগরিক দুবাইতে কাজ করে ও বিপুল রেমিট্যান্স আয় করে। তাই দুবাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো কঠিন হবে জর্ডানের জন্যও।
ঢাকা টাইমস/০৩জুলাই/একে

মন্তব্য করুন