গুজবের পেছনে জামায়াত সম্পৃক্ততার সন্দেহ

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০১৯, ০৯:২১| আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১১:৫২
অ- অ+
গুজব ছড়ানোর অভিযোগ লাকসাম থেকে আটক জামায়াত নেতা হায়াতুন্নবী

পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে বলে যে ‘গুজব’ ছড়ানো হয়েছে তার পেছনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকার সন্দেহ তৈরি হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যে সাতজনকে আটক করা হয়েছে তাদের একজন জামায়াত নেতা, অন্যজন জামায়াত নেতার ছেলে। বাকিরা অতি উৎসাহী হয়ে বা ইউটিউবে নাম ফাটাতে এই প্রচার চালিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

পদ্মাসেতুর জন্য মানুষের মাথা সংগ্রহের গুজব গত কিছুদিন ধরে এত বেশি ছড়াচ্ছে যে সরকারকে রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে এসব মিথ্যা। ফেসবুক ও ইউটিউবে পুরনো এবং অন্য ঘটনার ছবি জোড়া দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, দেশে ৪২টি দল বের হয়েছে মানুষের মাথা সংগ্রহে। কোথাও কোথাও ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ।

এই গুজব মানুষের মধ্যে এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, একাধিক এলাকায় অচেনা মানুষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে পিটিয়ে হত্যাও করা হয়েছে একজনকে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে মাইকিং করতে হয়েছে। তবু থামছে না এই প্রচার।

যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদেরকে শনাক্ত করে আটক করতে এরই মধ্যে অভিযানে নেমেছে গেছে পুলিশ ও র‌্যাব। বুধবার থেকে শুক্রবার সারাদেশে আটক হয়েছেন অন্তত সাত জন।

আটকদের মধ্যে কুমিল্লায় ধরা পড়া কুমিল্লার লাকসাম থেকে ধরা পড়া হায়াতুন্নবী স্থানীয় জামায়াতের নেতা। আর সাভারের আশুলিয়া থেকে আটক হওয়া আকরাম হোসেনের বাবা পাবনায় জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য।

জামায়াত সম্পৃক্ত দুই জনের একই ধরনের প্রচারের পেছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আছে বলে ধারণা করছে র‌্যাব। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আর কারা কারা এই অপপ্রচারে ব্যস্ত, তা বের করার চেষ্টা করছে বাহিনীটি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানিয়েছে, এরা আগেও ফেসবুকে সরকারবিরোধী প্রচার চালিয়েছেন। দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে আগেও নানা অপপ্রচারে লিপ্ত ছিলেন। রাজনৈতিক উস্কানি ছাড়াও কুসংস্কার এবং সামাজিক মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়ার আকাক্সক্ষাও কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আশাথী গ্রামের হায়াতুন্নবী একজন জামায়াত নেতা। তিনি উপজেলার পূর্ব লাকসাম এলাকার সভাপতি ছিলেন। কুমিল্লায় র‌্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার প্রণব কুমার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, হায়াতুন্নবী একজন জামায়াত নেতা। সেই উপজেলার পূর্ব লাকসাম এলাকার সভাপতি ছিলেন। তিনি জামায়াতের একজন কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটানো। তাই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ফেসবুকে গুজব এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আসছেন।’

ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার আকরাম হোসেনের বাবা পাবনার জামায়াতের নেতা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। র‌্যাব-১ এর এএসপি মো. কামরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিউজআই টোয়েন্টিফোর ডট কম নামে একটি নিউজ পোর্টাল থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আকরাম হোসেনকে আশুলিয়ার ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২০০৫ সালে পাবনার একটি স্থানীয় মাদ্রাসা হতে ফাজিল পাস করে। জানতে পেরেছি, তার বাবা পাবনা জামায়াতের রুকন।’

উদ্দেশ্য যখন নাম ফাটানো

শুক্রবার নড়াইল থেকে শহিদুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে চাকরি করেন। র‌্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) এএসপি শহিনুুল ইসলাম জানান, ‘সে যশোর পলিটেকনিক্যাল পড়াশোনা শেষ করেছে। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে পদ্মাসেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগবে কনটেন্ট তৈরি করে গুজব ছড়াচ্ছিল। তবে তার অন্য কোন রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।’

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মোহাম্মদ ফারুক নামের একজনকে মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। র‌্যাব-৯ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) এএসপি কামরুজ্জামান জানান, ‘তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।’

চট্টগ্রাম থেকে আরমান হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ফেসবুকে পোস্টের মধ্যে ছিল- এই মাত্র পাওয়া রক্তের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, কত মানুষের রক্ত লাগবে পদ্মা সেতুতে? পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে। এরই মধ্যে চারজন গায়েব। আতঙ্কে গ্রামছাড়া হাজারো মানুষ।

র‌্যাব-৭ এর মেজর মেহেদী হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কী উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেছেন। তার সঙ্গে আর কেউ আছে কি না, এটা বের করার চেষ্টা চলছে।’

বৃহম্পতিবার বিকালে রাজবাড়ীর পাংশা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তার নাম পার্থ আল হাসান। বয়স ১৬। র‌্যাব-৮ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নামজুল আরেফিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই ছেলে হুজুগে এই কাজ করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’

বুধবার বিকালে ভোলা থেকে একজনকে ধরার পর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আটক আবদুস শহীদ হাওলাদার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নিউটন মৌজার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, গুজব ছড়ানোর ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। মানুষের শান্তির ঘুম নষ্ট হয়েছে। সন্ধ্যা হতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত।

‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভোলায় মোট চারজন এমন আতঙ্ক ধরানো গুজব ছড়াচ্ছে। এর একজন বিদেশে থাকে। শহীদকে গুজব ছড়ানোর কাজে কোনো চক্র উৎসাহিত করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএস/ডব্লিউবি/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
বাংলামোটরে এনসিপির জুলাই চিত্র প্রদর্শনীর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
তাড়াশে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়িছাড়ার অভিযোগ
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা