দ্বিতীয় নতুন ওষুধের পরীক্ষা আজ

মশার নতুন ওষুধের প্রথম নমুনা ‘অকার্যকর’

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৪২
অ- অ+

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নতুন মশার ওষুধের যে নমুনা পরীক্ষা করেছে, সেটি কার্যকর হবে না বলেই মনে করছেন একজন কীটতত্ত্ববিদ। খাঁচায় রাখা ২৬ শতাংশ মশা মরেছে বলে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন এসেছে, তার ভিত্তিতে তিনি বলেছেন, এর দ্বিগুণ মশা মরলেই বলা যাবে এটি মোটামুটি কার্যকর ওষুধ।

একই ধরনের মতামত এসেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন বিশেষজ্ঞের পক্ষ থেকে। আর এই অবস্থায় নতুন একটি ওষুধের নমুনা দেশে এসেছে, যেটার কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কথা আজ।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনে যে ওষুধ ব্যবহার করে, সেটা পাল্টাতে চাইছে। ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে এই খবরটিও বড় হয়েছে। আর এরই মধ্যে নগর ভবনে একটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। খাঁচার ভেতর রাখা উড়ন্ত মশায় প্রয়োগ করে এক ঘণ্টায় ২৬ শতাংশ মশা মারা গেছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যদি ২৬ শতাংশ ওষুধ মশা মারা যায় তাহলে সেটাকে কোনোভাবেই কার্যকর ওষুধ বলা যায় না।’

‘শতভাগ মশা নির্মূলের আশা না করলেও কমপক্ষে ৫০ ভাগ মশা মরতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে ওষুধ কার্যকর আছে।’

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায় শতকরা ৮০ শতাংশ মশা মারলেই সেটাকে কার্যকর ওষুধ বলা যাবে।’

কোন দেশ থেকে নতুন ওষুধের নমুনা এসেছে, সেটি প্রকাশ করেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি ভারতীয় কোম্পানির ওষুধ এসেছে।

অধ্যাপক শরীফুল বলছেন, ‘ভারত বা চীনের তুলনায় ইউরোপের দেশগুলোর ওষুধ মানসম্মত। কারণ তারা কোয়ালিটির বিষয়টি নিশ্চিত করে ওষুধ বাজারজাত করে থাকে।’

অধ্যাপক শরীফুল মনে করেন, নতুন ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার বদলে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নির্মূল করতে যখন সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে তখন কোথা থেকে, কী ওষুধ আনা হচ্ছে সেটা জানা থাকলে যারা দক্ষ, যাদের এ বিষয়ে জানাশোনা আছে তারা মতামত দেয়ার সুযোগ পেত।’

আইইডিসিআর এর পরিচালক বলেন, ‘মশার ওষুধ কেনার যে টেকনিক্যাল কমিটি, আমাদের প্রতিষ্ঠানও তার সদস্য। তবে আমরা ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে এককভাবে পরামর্শ দেই না। ওষুধ এলে পরীক্ষা করে বলি এটা ব্যবহারের উপযোগী কি না। আর কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেদনটি বিবেচনায় নেয়া হয়।’

সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও তথ্য মিলেছে দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা উত্তর নতুন ওষুধের নমুনা এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অপরদিকে ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে নমুনা এনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

গত শুক্রবারের পর গতকাল সোমবার ঢাকা দক্ষিণ মশা নিধনের নতুন একটি নমুনা ঢাকায় আনে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সে করে ওষুধের নমুনা আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়। তবে কোন দেশ থেকে এ নমুনা ওষুধ কোনো দেশ থেকে আনা হয়েছে বিষয়টি তিনি জানাতে পারেননি।

নতুন এই নমুনা আজ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। বলেছেন, ‘আমাদের নতুন ওষুধ চলে এসেছে, এখন বিমানবন্দরে রয়েছে। সেই ওষুধ আনার পর সকল সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।’

মশা নিধন পদ্ধতিতে নতুনত্ব দরকার

মশা নিধনে নগর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত মূলত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটায়। উড়ন্ত মশাকে মারতে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়। এর বাইরে মশার প্রজননক্ষেত্রগুলোতে ¯্রে করা হয় লার্ভা বা বাচ্চা মশা মারতে। কিন্তু এতে কাক্সিক্ষত ফলাফল কখনো আসেনি।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক শরীফুল মনে করেন বলেন, ফগার মেশিন নিয়ে ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি উড়ন্ত মশা মারার জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান থেকে ওষুধ ছিটানো যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা দরকার’।

ওপর থেকে ওষুধ ছিটানোর পর সরাসরি মানুষের গায়ে পড়লে সেটা তাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই আগে ভাগে যে এলাকায় ওষুধ ছিটানো হবে, সেই এলাকায় মানুষ যদি কিছু সময়ের জন্য বাড়ির বাইরে না যায়, তাহলে সেই ক্ষতি হবে না।’

এডিসের লার্ভা ধ্বংস করতে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার যে কার্যক্রম এই মুহূর্তে চলছে, সেটাও কার্যকর বলেই মনে করেন অধ্যাপক শরীফুল। বলেন, ‘এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ওষুধ ছিটিয়ে শতভাগ মশা নির্মূল হবে না। কিন্তু যদি উড়ন্ত মশার ৫০ ভাগও মারা যায় এভাবে, পাশাপাশি যদি লার্ভা নষ্ট করা যায়, তাহলে মশার প্রকাপ কমবে নিশ্চিত।’

মানুষ যেসব বাসায় থাকে তার পাশাপাশি নির্মাণাধীন বাড়িতে এডিসের লার্ভা ধ্বংসেও সমানভাবে জোর দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

সেই সঙ্গে বাসা বাড়িতে কোনো পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে, কোথাও যেন আবর্জনা পড়ে না থাকে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শও দিয়েছেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকটের প্রেক্ষিতে যারা পাত্রে পানি ধরে রাখেন, তাদেরকে সেসব পাত্র ভরার সঙ্গে সঙ্গে ঢেকে রাখার পরামর্শও এসেছে এই অধ্যাপকের পক্ষ থেকে। কারণ, মশা ডিম পারলে তা ফুটে বাচ্চা বের হয় কেবল পানির সংস্পর্শে এলে।

ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/বিইউ/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
স্টার্কের দ্রুততম ৫ উইকেট, সাত ব্যাটসম্যানের শূন্যসহ ২৭ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ
‘জ্বলবে আগুন শহরজুড়ে, হামলা-ছিনতাই বন্ধ না হলে’ স্লোগানে শিক্ষার্থীদের মিছিল
পাকিস্তানে বৃষ্টি ও বন্যায় ১১০ জনের প্রাণহানি
এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও নিয়ে ইউটিউবের নতুন নীতিমালা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা