শরীরে ফ্যাট ও জিনের প্রভাব

সুস্বাদু খাবার মানেই তাতে ফ্যাট রয়েছে। তার উৎস বাদাম বা অন্য কোনো নিরামিষ খাদ্য হতে পারে অথবা প্রাণিজ চর্বিও হতে পারে। গবেষকরা ফ্যাটের বিপদ, জিনের প্রভাব, সুস্থ ও অসুস্থ মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন তথ্য সংগ্রহ করছেন। ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো
ফ্যাট আসলে কতটা খারাপ?
কিন্তু খারাপ ফ্যাট পুরোপুরি ত্যাগ করা কখনো সম্ভব হয়নি। মানব জাতির ইতিহাসে মানুষ কখনো এখনকার মতো মোটা ছিল না। গোটা বিশ্বে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন। কম ফ্যাটের খাবার সহজলভ্য করা ও অনেক প্রচারাভিযান সত্ত্বেও এমনটা ঘটছে। কিন্তু এর পেছনে কারণ কী? পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. মাটিয়াস রিডল বলেন, ‘কেউ যদি ফ্যাট ও তেলের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় কমিয়ে দেন, তখন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে। ফলে ওজন ও রক্তে ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায়।’
কিন্তু ফ্যাট কি তার ভাবমূর্তির মতো সত্যি এত খারাপ? সাধারণ মানুষের মনে এ বিষয়ে নানা ধারণা রয়েছে। কেউ মনে করেন, নির্ভর করছে কী ধরনের ফ্যাট তার ওপর। যদি ভালো মানের কোল্ড প্রেসড তেল হয়, তাহলে তা ভালো হতে পারে। অনেকে সব কিছু অলিভ অয়েল দিয়ে রাঁধেন। কেউ বা লিনসিড অয়েল বা বাদাম তেল পছন্দ করেন।
জিনের প্রভাব কিছু ধরনের ফ্যাট অবশ্যই আমাদের অসুস্থ করে তোলে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই কি তা প্রযোজ্য? জার্মানির পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের প্রফেসর আন্দ্রেয়াস ফাইফার ৪৬ জোড়া যমজ ভাইবোনের ওপর সেই পরীক্ষা চালাচ্ছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের খাদ্যে ফ্যাটের অনুপাত বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, যমজ ভাইবোনদের একই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কিন্তু সব যমজের ক্ষেত্রে তা ঘটছে না, বরং বিশাল পার্থক্য চোখে পড়ছে। কিছু যমজ ভাইবোন ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়ে অন্যদের তুলনায় বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছে। কোলেস্টরলের মাত্রা সম্ভবত জিনের ওপর নির্ভর করে।
জার্মানির পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের প্রফেসর আন্দ্রেয়াস ফাইফার বলেন, ‘কোলেস্টরলের মাত্রা হয় বেশি অথবা কম জিনের মধ্যেই তা স্থির করা আছে। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বড়জোর ১৫ শতাংশ বাড়ানো অথবা কমানো সম্ভব। কারো কোলেস্টরলের মাত্রা খুব বেশি হলে এমনকি খুব স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও তা কমানো সম্ভব নয়।’
অর্থাৎ খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টরলের মাত্রায় অতি সামান্য হেরফের সম্ভব। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. মেলানি হ্যুমেলগেন তাই রোগীদের পাউরুটিতে মাখন লাগিয়ে খাবার অনুমতি দেন। কারণ আজকাল কোলেস্টরল কমানোর ওষুধ আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও তিনি রোগীদের সতর্ক থাকতে বলেন।
কার্ডিওলজিস্ট ড. মেলানি হ্যুমেলগেন বলেন, ‘কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে মাঝেমধ্যে ভাবি, সতর্ক থাকা উচিত। কী আর হবে, সকালে ভালো করে সসেজ খেয়ে দুপুরেও মাংস ও কিমার পদ খাওয়া যাক এমন কথা বললে চলবে না। কারণ এ সব খাবার আসলে প্রাণিজাত কোলেস্টরল ও ফ্যাটের বোমা। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এমন খাবার বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।’
(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/একে)

মন্তব্য করুন