বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্যারিশমেটিক লিডার

সঞ্জয় কুমার মুখার্জি
| আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩২ | প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৬
সঞ্জয় কুমার মুখার্জি

বাংলার ইতিহাস হলো আজন্মকাল পরাধীনতা, আর শোষকশ্রেণির নির্মম নির্যাতন ও নিষ্পেষণের। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা এবং এর লক্ষ্যে সংগ্রামের মাধ্যমে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ন্যায্য দাবি আদায় এই অঞ্চলের মানুষের সহজাত।

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়- রাজা শশাঙ্ক, পাল বংশ ও সেনযুগে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কিছুটা চর্চা ও উন্মেষ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীকালে মুঘল যুগে শায়েস্তা খানের শাসনামল এবং ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজদের হাতে পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। এর মধ্য দিয়ে বাংলার আকাশে দু‍র্যোগের কালো মেঘ নেমে আসে। ১৯৪৭ সালের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দেশভাগ, অতঃপর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলা ভাষা এবং বাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে দৃঢ়ভিত্তিতে সংস্থাপনের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ক্যারিশমেটিক লিডার। তার মধ্যে ছিল অসাধারণ এক সম্মোহনী শক্তি, যা দিয়ে তিনি সব মানুষের মন জয় করতে পারতেন। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শক্তিশালী, সাহসী, আকর্ষণীয়, নির্লোভ এবং স্বদেশপ্রেমের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার মাধ্যমে বাংলার আপামর জনগণ অনুপ্রাণিত হয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করে আজকের স্বাধীনতা।

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, তথা বাংলার প্রাণপুরুষ। সারাজীবন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন তিনি। নিজের জীবন বাজি রেখে ফাঁসির কাষ্ঠের সামনে গিয়েও তিনি মাথানত করেননি। বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তির নাম নয়, বরং বাংলাদেশের অপর নাম। মুজিব মানে স্বাধীনতা, সংগ্রাম, সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক তথা বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আহমদ ছফা যথার্থ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ। একটা আরেকটার পরিপূরক এবং এ দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছেন।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় শতসহস্র বছরের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান রূপকার এবং এই অনন্য কীর্তির জন্যই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। অবিভক্ত পাকিস্তান যখন ছিল, আমাদের এই অঞ্চলকে বলা হতো পূর্ব পাকিস্তান। শেখ মুজিব প্রথম থেকেই পাকসামরিক বেনিয়া শাসকগোষ্ঠীর ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এই অঞ্চলকে বাংলাদেশ বলে অভিহিত করেছেন।

‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে বাংলার মানুষকে আলোড়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলার হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব মানুষ এক কাতারে এসে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ধর্মের মানদ-ে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল ব্রিটিশদের নির্মম অত্যাচার এবং বৈষম্য থেকে মুক্তি। কিন্তু পাকিস্তানিরা জাতি-ধর্মের নাম দিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে পূর্ব বাংলায় বিভেদ ও বৈষম্যের প্রাচীর সৃষ্টি করল। দিনে দিনে বাংলা তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে ফেলতে থাকে। ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবোধ বাংলার মানুষের মনে নতুন এক চেতনার জন্ম দেয়। বাংলার মানুষের চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন।

শেখ মুজিব অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী এই পূর্ববঙ্গে উর্দু ভাষাকে বাংলার পরিবর্তে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।

বাংলা তার জাতিসত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার কথা কল্পনা করা অসম্ভব। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শুভসূচনা হয়। ভাষাসংগ্রামকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামে পরিচিত। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বুঝতে পেরেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে উদ্ধার পেতে হলে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই।

এ জন্য ঠিক এক বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সালের তৃতীয় কাউন্সিল সভায় ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী ও অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন, যে দেশে ধনী-গরিব সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা সোনার বাংলা তৈরি করবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :