বেঈমান মন

জে. আলী
 | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:২২

কেন ফোন দিব। তুমি তো ব্যস্ত।

আমি ব্যস্ত বলে তুমি ফোন দিবে না।

না, দরকার কি? তুমি তো ছায়ার মতো, ধরতে গেলে পালিয়ে যাও। আবার প্রয়োজন হলে পিছু নাও।

তুমি কি খোটা দিচ্ছ।

না, খোটা দেয়ার কি আছে। আমার অবস্থা তো শাঁখের করাতের মতো। আসতে যেতে দুই দিকেই কাটে-আর কত

এভাবে বলছো কেন?

আর কিভাবে বলবো বলো। ফোন দিলে বিজি পাই। এক মিনিট কথা বললেই হাঁপিয়ে ওঠো। প্রয়োজন ছাড়া তুমি ফোনও করো না। সম্পর্কের সুতোটা একপাশে ধরে রাখা যায় না। দুপাশে সমান তালে দুজনকেই ধরতে হয়, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি একাই সুতাটা ধরে আছি এক পাশে অনেকদিন ধরে। এখন হাত অবশ হয়ে আসতে চায়। পা ঝি ঝি করে। স্মৃতিগুলো স্পষ্ট কিন্তু আবেগের জায়গাটা আর আগের মতো স্পর্শকাতর নয়। কেন যেন মনে হয় শুধু সম্পর্কটা ভাঙ্গতে পারছো না বলেই ধরে রেখেছো অনেকটা চক্ষু লজ্জায়। অথবা দীর্ঘদিনের অভ্যাসগত আনুগত্যে।

হুম, সবই বুঝলাম। এখন তা হলে কি করণীয় আমার? তুমি কি সম্পর্ক থেকে সরে যেতে চাচ্ছ?

সে চেষ্টা তো অনেক দিন থেকেই করছি কিন্তু পারছি কই। পারলে তো মানসিক শান্তিটা পেতাম। পারাটা খুব প্রয়োজন।

নিজের জন্য না হলেও তোমার জন্যে। কারণ তোমার দিক থেকে সম্পর্কের আগের সেই টানটা আর নেই। অনেক ভাবেই আমাকে বুঝিয়েছো আমার মূল্যটা আর আগের মতো নেই তোমার কাছে।

মানে কি?

মানেটা বললে তুমি নিতে পারবে না।

তারপরও বলো, শুনতে চাই। জোর গলায় বলে শায়লা।

মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি পেপসি কোর ক্যান। খাওয়া শেষ হলে কেউই খালি ক্যান হাতে নিয়ে হাঁটে না। নতুন রেড বুল চায়।

ছি! তুমি এভাবে বলতে পারছো। ছি! আবেগাপ্লুত শায়লা।

পারাটা উচিত। এতদিন পারিনি বলেই নিজেকে আবুল আবুল লাগে নিজের কাছে। অথচ আমি ছিলাম ক্লাসের ফার্স্ট বয়। চৌকস ক্রিকেটার। কর্পোরেটে এখনও সফল বস্।

তুমি তো আমারও বস্। হেসে বলে শায়লা।

হেয়ালী রাখ। তেল মারার দরকার নাই। বস হয়তো হয়েছি কিন্তু সোলমেট তো হতে পারিনি। অথচ হাতে হাত ধরে হেঁটেছি মাইলের পর মাইল, কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছো নিশ্চিন্তে। আবেগের ঘোরে গভীর চুমুতে ক্ষত বিক্ষত বিহম্বল করেছি তোমাকে। বাধা দাও নি কখন। অথচ তোমার সোলমেট হতে পারেনি। হঠাৎ করে বললে ভালবাসার মানুষ আর সোলমেট এক জিনিস নয়।

এক সাথে চলতে গেলে ওসব হয়। যা কিছু করেছো জোর করেই করেছো। এটা গর্ব করে বলার মতো কিছু নয়। স্বাভাবিক গলায় বলে শায়লা।

হা তাইতো। এমনটিই এখন বলবে। আর এসব আবার হবে অর্ণবের সাথে।

ওকে এসবে টানছো কেন। বিরক্ত হয় শায়লা।

না টানলেও চলে আসে যে। তুমি তো ফোনে, এফবি ম্যাসেঞ্জারে সারাক্ষণ ওর সাথেই বিজি থাক। রাত দ্ইুটায়ও দেখি তোমার ম্যাসেঞ্জারে সবুজ আলো জ¦লছে। হায় বা হ্যালো দিলে রিসপন্স নাই। অথচ আগে এক হায় দিলে দুশটায় হায় হ্যালো আমাকে অতিষ্ট করে ছাড়তে। কোন কারণে তোমাকে রিপ্লাই দিতে দেরী হলে অনেক কথা শুনাতে। অভিমান করতে। আর এখন .......

আচ্ছা রাখি। আমার ভাল লাগছে না। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয় শায়লা।

.... .....

হ্যালো হ্যা, আছো। প্রশ্ন করে শায়লা।

জি¦ বলো। শুনছি

তুমি কি বাইরে?

হ্যা। বাইরে।

না মানে বলছিলাম কি আমাকে এমবি পাঠাতে পারবে? আদুরে গলায় বলে শায়লা।

হ্যা, পারবো কত এমবি বলো।

সাতদিনের প্যাকেজ দাও। তুমি কই, অফিস থেকে বেরিয়েছো। জানতে চায় শায়লা।

আচ্ছা, পাঠাচ্ছি।

... ... ...

হ্যালো। এত বিজি কেন? অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছি শুধু বিজি দেখাচ্ছে। তোমার কি ওয়েটিং ওঠে না।

না মানে মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। খাপছাড়া ভাবে বলে শায়লা।

ও তাই, এতক্ষণ! কি নিয়ে কথা বললে?

আচ্ছা আমি রাখি। এমবিটা পাঠাও প্লিজ। তিরিশ জিবি দিও। এক্ষুণি পাঠাও প্লিজ তাড়া দেয় শায়লা।

আচ্ছা।

... ... ...

আমি অনেককেই প্রশ্ন করেছি এ জগতের সবচেয়ে বড় বেঈমান কে? সবাই এক বাক্যে উত্তর দিয়েছে-মীরজাফর। সিরাজের সাথে বেঈমানী করে রাজা হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেছে খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালীর সাথে বেঈমান করেছিল। কেউ বলেছে নেত্রসেন। যে মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে মাস্টার দ্য সূর্যসেনকে বৃটিশদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কেউ বলেছে বাইবেলে বর্ণিত জুডাস ইসকারিয়াট, যে মাত্র তিরিশটি মুদ্রার বিনিময়ে মানবতার ত্রাতা হযরত ঈসা (আ) কে ধরিয়ে দিয়েছিল রোমান সৈন্যদের হাতে। কেউ বলেছে মুসেনিগো, যে তার প্রিয় গুরু জ্যোতির্বিদ কোপারনিকাসকে ধরিয়ে দিয়েছিল পাদ্রীদের হাতে। কেউ বলবে নাথুরাম বিনায়ক গোডসে, যে মহত্মাগান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেছিল। কিন্তু আমি বলবো না, পৃথিবীর সবচাইতে বড় বেঈমান হলো আমার মন। যে আমার সাথে বেঈমানী করছে মারাত্মকভাবে। আমার মতের বিরুদ্ধে বলছে। আমি যা করতে চাই নাই তা আমাকে দিয়ে করাচ্ছে। যেমন ধরুন, আমি জানি শায়লা আমার নেই। সে অন্য কারো জন্য এখন অপেক্ষা করে। আমার দেয়া দামী জামাটা পড়ে অন্য কোথাও ডেড করে (জামার কথাটা বললাম বলে ছোট লোক ভাববেন না, মনের দুঃখে বলে ফেলেছি)। মনে বড়ই কষ্ট। নিজের মনটাকেও ধরে রাখতে পারছি না। মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নেই আর ফোন করবো না। শায়লা ফোন করলেও ধরবো না। নো কমিউনিকেশন। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, এক বেলা, এক দিন যায় খুব কষ্টে। আমি ফোন না করলেও শায়লা করে। ধরি না। মনটা চায়, আবার ফোনের ডায়ালেই হাত দেই, আঙ্গুল সরিয়ে নেই। ওর এফবি প্রোফাইলে ডু মারি। নতুন কোন পোস্ট আছে কি না। অন্য কারো সাথে। ম্যাসেঞ্জারেও যাই। রিপ্লাই দিবো না। পণ করি। অথচ সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আবার ফোন দেয়। ধরি না। দুই দিন যায় আমার কষ্ট বাড়তে থাকে। নিঃশ^াস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। ফোন না করার প্রতিজ্ঞা থেকে আস্তে আস্তে সরে আসি। এরপর শায়লা বুঝতে পারে আমি রাগ করেছি। ওর কিন্তু রাগ ভাঙ্গানোর কোন চেষ্টাও নেই। এক ম্যাসেজ পাঠিয়েছে হুমকি দিয়ে। একই ম্যাসেজ মোবাইলে, ম্যাসেঞ্জারে, ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপে। “কথা বন্ধ করেছো। ফোনও ধরছো না। কথা কিন্তু তুমি ঠিকই বলবে আজ না হয় কাল, যখন আমার প্রয়োজনটা শুধু ফুরিয়ে যাবে”।

ম্যাসজটি পড়ার পর ভাবতে থাকি এখন আর কি চুপ থাকা উচিত হবে। আমার ইগোতেও লাগে। কত আত্ম অহংকারী হলে এমন লিখতে পারে। মন খারাপ তাই ফোন ধরছি না। সরিও তো বলতে পারতো! অথবা আরো সফটলি বলতে পারতো ঝামেলায় আছি বা বিপদে আছি। তোমার হেল্প দরকার তা না করে হুমকি দিচ্ছে। কাজও আদায় করবে আবার ভাবও নিবে। কপাল আমার। মেয়েরা এমন কেন হয়! একবার যদি বুঝে ফেলে যে ছেলেটি তার প্রতি দুর্বল তখন তাকে নিয়ে খেলতে থাকে। হ্যা অবশ্য ঠিক আমরাও মফিজ বলে সেই খেলার সুযোগ করে দেই। নিজেও বুঝি ধরা খাচ্ছি। বুঝি না যে তা না। কিন্তু বুঝেও কোন লাভ হচ্ছে না। শুধু লস আর লস। চালানসহ গায়েব। মূল্যবান সময় নষ্ট নিজের কষ্টের উপার্জনের টাকা নষ্ট। নিজের ব্যক্তিগত কাজের বারোটা বেজে যাচ্ছে। তারপরও ও ডাকলে কার্তিক মাসের কুত্তার মতো লে লে করতে করতে ছুটে যাই। শত চেষ্টায়ও আটকাতে পারিনা নিজেকে। এবার আর হুমকি দামকিতে কোন কাজ হবে না। দরকার নাই কচুরি পানার মতো নদীর জলে ভাসতে ভাসতে গন্তব্যহীন যাত্রার। মনই যদি না পাই, না পাই ভালবাসা তাহলে কিসের জন্যে পড়ে থাকবো শায়লার পিছনে। শুধু শুধু, শুধু শুধু আর না।

এত কিছুর পরও ম্যাসেজটা পড়ে অস্বস্তি লাগছে। ফোনটা মনে হয় করা দরকার, কারণ বিপদে না পড়লে তো এত রিঅ্যাক্ট করতো না।

... ... ...

হ্যালো, শায়লা।

বলো কি হয়েছে তোমার ফোন ধরছো না কেন? দরকারে তো জীবনেও পাওয়া যায় না। আর মেয়েদের মতো এত ফুসুত ফুসুত রাগ করো কি কারণে? তোমার রাগ ভাঙ্গানোর চাকুরি কি আমি করি নাকি? মাসে কয় টাকা বেতন দাও। এক শ^াসে কথাগুলো বলে শায়লা।

না, মানে ... ... ...

কাজের কথা শোন। আমার বাসার আইপিএস এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। মিস্ত্রি পাঠাও। আর এমবি তো এখনও পাঠাও নি। আমার বাংলা লিংক এ তিরিশ জিবি পাঠাতে বলেছিলাম।

আচ্ছা, আচ্ছা। পাঠাচ্ছি।

এবার বলো ফোন দিয়েছো কেন? জানতে চায় শায়লা।

না এমনিতেই।

কি চুপ করে আছ কেন? শোন তোমার জন্য একটু চিকন চালের খিচুড়ী আর কালো ভূনা করেছি। পাঠিয়ে দিবো না এসে খেয়ে যাবে। আন্তরিকতার সুরে বলে শায়লা।

বলদ! আমি সত্যিই একটা বলদ। বুক খালি করা দীর্ঘশ্বস নেমে যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :