পাবলিক টয়লেট স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিন

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সবক্ষেত্রেই তার অগ্রগতি প্রশংসনীয়। এই দেশটির প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকা। বিশ্বের যেকটা শহর দ্রুত বর্ধমান তার মধ্যে অগ্রগণ্য ঢাকা। বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষা লাভ থেকে জীবিকা, প্রায় সবক্ষেত্রেই ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে অনেককেই ছুটে আসতে হয় এই শহরে। ঢাকার নানাস্তরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রতিদিনই যোগ হওয়া এসব মানুষের কারণে জনঘনত্বও বাড়ছে এই শহরের।
গেল এক দশকে ঢাকাসহ সারা দেশেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে চলার পথে একটি বিষয় সর্বদাই সাধারণের জন্য পীড়াদায়ক। সেটি হলো এই বিশালায়তন শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এর ফলে চলতি পথের মানুষকে যেমন ভোড়ান্তিতে পড়তে হয়, তেমনি ছিন্নমূল-গৃহহীন অনেকেই মলত্যাগের জন্য বেছে নেয় ফুটপাতকে। এছাড়া যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষকেই দেখা যায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে।
আবার সচেতনদের অনেকেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে পারেন না বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রাখতে বাধ্য হন। এভাবে প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রাখলে তা শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
দেখা যায় উত্তর দক্ষিণ মিলিয়ে ঢাকা শহরে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় পাবলিক টয়লেট রয়েছে। কিন্তু নগরবাসীর তুলনায় তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। প্রয়োজনীয়সংখ্যক পাবলিক টয়লেট না থাকার কারণে মানুষ ফুটপাতে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। তাতে করে ফুটপাত মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। ফুটপাতে হাটতে না পেরে পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমাকে শাহবাগ, নিউমার্কেট, চানখারপুল এলাকায় বেশি চলাচল করতে হয়। অন্য এলাকার কথা বাদ দিলে ঢাবি ক্যাম্পাসের অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে, যাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যত্রতত্র মলমূত্রের ছড়াছড়ি। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসের প্রায় সব ফুটপাতই ‘উম্মুক্ত টয়লেট’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
একই চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকারও। এই হাসপাতালের সামনের ফুটপাত দিয়েও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার কোনো পরিবেশ নেই। মল-মূত্রের কারণে ফুটপাতের দিকে তাকানোও দায়। একবার চোখ পড়লেও ভিনমি খাওয়ার জোগাড় হবে যে কারোর। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেলের সামনের দিকের ফুটপাতে নতুন করে সংস্কারে কাজ চলছে। কিন্তু এটি নষ্ট হতে হয়তো মাস খানেকের বেশি সময় লাগবে না।
সম্প্রতি শাহবাগ দিয়ে যাওয়ার পথে এক পথচারীর জিজ্ঞাসা ছিল, এখানে পাবলিক টয়লেট কোথায়? জাতীয় থেকে শুরু করে যেকোনো দিবস-উৎসবে স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচণ্ড ভিড় হয়। হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়।
এসব উৎসবে আসা অনেককেই দেখা যায় হন্যে হয়ে পাবলিক টয়লেট খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়েন বেশি। হয়তো কোথাও কোনোভাবে তারা তাদের প্রয়োজন সেরে নিচ্ছেন। কিন্তু শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যদি পাবলিক টয়লেট থাকে এবং সেটির যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা হয় তাহলে মানুষকে বিপদে পড়তে হয় না।
ঢাকার দুই সিটিতে সদ্য দুজন নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের আগে বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের। বাসযোগ্য নগরের প্রধান বৈশিষ্ট পরিবেশ সুরক্ষা। আমরা আশা করতেই পারি পরিবেশ রক্ষার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে মেয়রদ্বয় পাবলিক টয়লেটের বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখবেন।
দায়িত্বের শুরুতেই তারা ঢাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের কার্যকর উদ্যোগ নেবেন, রাজধানীর বাসিন্দা হিসেবে এমন প্রত্যাশা রাখা নিশ্চয়ই বেশি দাবির মধ্যে পড়বে না। পাবলিক টয়লেট স্থাপনের পাশাপাশ যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য বেতনভুক্ত কর্মীও নিয়োগ দিতে হবে। একথা বলাই যায়- মানুষের স্বস্তিতে বসবাসই কার্যকর নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক, মূলধারার গণমাধ্যমে কর্মরত

মন্তব্য করুন