করোনা সতর্কতায় সোশ্যাল মিডিয়া বেশি প্যানিক তৈরি করছে

নোভেল করোনাভাইরাস ২ যেটা সেটা একদমই নতুন একটি ভাইরাস। গত ডিসেম্বরে বিশ্বে প্রথম আমরা এটি দেখতে পেয়েছি। যদিও এই প্রজাতির ভাইরাসকে আমরা আগেও ফেস করেছি। এবারের ভাইরাসের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, এটার ইনফেকশন তৈরির যে রেট বা মর্টালিটি বা ফার্টালিটি যেটাই বলি না কেন। রোগী খারাপ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে। শ্বাস নালী থেকে হাঁচি কাশি এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাশের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। তবে অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় এটির আয়তন একটু বেশি। ফলে এটি বিভিন্ন সার্ফেসে গিয়ে আটকে যায়।
সার্ফেসে অনেকক্ষণ ধরে অবস্থান করে। যদিও একটু ভিন্নতা আছে। যেমন বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্নভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সেখান থেকে যদি স্পর্শ করে আবার আমাদের মুখে নেই বা খুব ক্লোজ সংস্পর্শে এসে কথা বলি তাহলে চলে আসতে পারে। আমি যেহেতু জানি না কার মধ্যে করোনাভাইরাস আছে।
সুতরাং আমরা সবার থেকে সাবধান থাকব। কাছাকাছি আসব না বা আমরা বারবার মুখে হাত দেবো না। যেন এই করোনাভাইরাস আমাদের শ্বাস নালীতে আবার ঢুকে যাওয়ার সুযোগ না পায়। একবার যখন শ্বাস নালীতে ঢুকে যায় বা সেটেল ডাউন করে। প্রথমে ভাইরাসটি তার সংখ্যাটাকে বাড়াতে থাকে। তারপর প্রত্যেকটা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে একটা যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
যুদ্ধে যে জয়ী হয়। ফলাফল তার দিকেই যায়। আমার আপনার ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসটিকে যদি ইরাডিকেট করে ফেলতে পারে তাহলে আমরা হয়তো কিছুই বুঝব না। কারণ একটা মোটা অংশ জনগণের মধ্যে কোনো রকম উপসর্গ তৈরিই হয় না। ইনফেকটেড হওয়ার পরেও বা করোনা ধরা পড়ার পরেও।
যদিও আমরা স্টাডিতে দেখেছি। যাদের আমরা যদি টেস্ট করেছি। দেখি তাদের টেস্ট পজেটিভ আসে। করোনারর জন্য যদিও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। আমরা রোগীদেরকে শুধু উপসর্গ ধরে ধরেই শুধু চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যেমন কারো গলাব্যথা বা জ্বর। এসবের জন্য আমরা সব সময় যেগুলো করি, সে ওষুধগুলোই দিচ্ছি। এসময় অক্সিজেন লেভেলটা অনেক বেশি কমে যায়। কারণ, প্রধান টার্গেট অর্গান হচ্ছে ফুসফুস।
ফুসফুসে ভাইরাসটা যাওয়ার পরে বিশাল একটা পরিবর্তন তৈরি করে। যার ফলে প্রকৃতি থেকে আমরা যে অক্সিজেনটা নেই। সেটা আমাদের ফুসফুস পার হয়ে আমাদের রক্তে বা শরীতে মিশে যেতে পারে না। এখানে একটা সাপ্লিমেট অক্সিজেনের বিশেষ প্রয়োজন হয়। এমনকি পরিস্থিতি এতটাও খারাপ হয়ে যেতে পারে। শুধু সাপ্লিমেট অক্সিজেন বা ফেস মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন দিয়েই রোগীকে সিনটোম ফ্রি করে ফেলতে পারি না।
খুব খারাপ রোগীদের ক্ষেত্রে লাইফ সাপোর্ট, যেটা বাংলাদেশে বলি ভেন্টিলেটর সাপোর্টের দিকে যেতে হয়। আমরা বাই ফোর্স বাতাশটাকে বা অক্সিজেনটাকে ফুসফুসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেই। তারপরেও কিন্তু রোগী খারাপ হয়ে যায়। আসলে আমাদের কাজ হচ্ছে ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। এর বাইরের প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই। যদিও বিদেশে একমো বলে একটি সিস্টেম আছে। এক্সট্রা কর্পোরিয়াল সাপ্লিমেনটেশনের ব্যবস্থা আছে। ওটা হয়তো কিছুটা কাজ করবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই ভেন্টিলেটর সাপোর্ট পর্যন্তই আমরা নিয়ে যেতে পারব। তবে আশার কথা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত স্টাডি যেটা বলে বা বিবিসি নিউজে আমরা যেটা দেখেছি।
ভেন্টিলেটরে খুব খারাপ রোগীদের ক্ষেত্রে আইসিইউতে স্থানান্তর করার পরেও যদি প্রথম ২৪ ঘন্টায় ভেন্টিলেটর না লাগে তাহলে বোঝা যায়। রোগীর ইমিউন সিস্টেম হয়তো বা জিতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের ফলাফলটা ভালো আসে। উন্নত বিশ্বে এখন পর্যন্ত মর্টালিটি রেট বা খারাপ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাটা ৫০ শতাংশ।
মানে আইসিইউতে গেলেই যে শেষ তা কিন্তু নয়। এখানে আমরা কিন্তু একটা আসা ধরে রাখতে পারি।
আমরা কী করব করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে গেলে? যেহেতু আমাদের হাতে কোনো ট্রিটমেন্ট অপশন নেই। সুতরাং একমাত্র বেঁচে থাকার উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ। যেভাবেই হোক, আমরা কোনো ভাবেই নিজেকে করোনাভাইরাসের সঙ্গে স্পর্শে আসতে দেবো না।
আমরা অবশ্যই জনসমাগম এড়িয়ে চলব। কোনো জনসমাগমে আমরা আপাতত যাব না। বারবার আমাদের হাত ধুতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই আমরা মাস্ক ব্যবহার করব। তবে কাপড়ের তৈরি মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনো ভ্যালু নেই। একদম জিরো ভ্যালু। সুতরাং কাপড়ের তৈরি কোনো মাস্ক আমরা ব্যবহার করব না। মিনিমাম সার্জিক্যাল মাস্ক যেগুলো বাজারে পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করব।
তবে একটা জিনিষ প্যানিক হওয়া যাবে না। আমার একটু জ্বর হচ্ছে, কাশি হচ্ছে, গলাব্যাথা হচ্ছে। এটা নিয়ে যে করোনা হয়েছে। আমি মরে গেলাম এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। সিনটোম শুরু হচ্ছে, হট লাইনে একটু উপদেশ নিয়ে নিতে পারেন। আমি অনেকগুলো রোগী পাচ্ছি আমার চেম্বারে। একদম ইয়াং ছেলে। কোনো রকমে শ্বাসকষ্ট বা কোনো অসুখ ছিল না। হঠাৎ করে খুব দম বন্ধ লাগছে। আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা গেল। সব কিছুই নরমাল।
কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলো। সে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ইউটিউবে কেমন সময় দেয়? উত্তর- সে সারাক্ষণই দেখতে থাকে। করোনা নিয়ে অনেক বেশি কথাবার্তা নেগেটিভ পজেটিভ মিলিয়ে। নেগেটিভের সংখ্যায় বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একদম ভর্তি নেগেটিভ বার্তা। যারা একটু ভয় পাচ্ছেন বা যাদের মনে হচ্ছে না জানি আমার কী হয়ে গেল।
আমি বলব, একটি নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ফেসবুক বা ইউটিউবে না তাকানোই ভালো। এটা প্যানিক তৈরিতে বেশি রোল প্লে করছে বলে আমার কাছে মনে হয়। সচেতনতা তৈরির জন্য ইতিমধ্যে অনেক বেশি কথাবার্তা বিভিন্ন মিডিয়াতে আমরা পেয়ে গেছি। আমরা জানি যে কী করতে হবে। শুধু সেটুকু মেনে চললেই মনে হয় উত্তম। এটাই আমাদের করোনাকে প্রতিরোধ করবে। করোনাকে এভাবেই জয় করতে পারব।
চিকিৎসক: রওশন আরা খানম, (এম ডি, চেস্ট ডিজিজেস), কনসাল্ট্যান্ট (বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ), ইউনাইটেড হসপিটাল
শ্রুতিলিখন: শেখ সাইফ
ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এসকেএস

মন্তব্য করুন