কাপাসিয়ায় ধনেপাতার বাণিজ্যিক চাষ

শামীম সিকদার
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২৩

শান্ত নিরিবিলি গ্রামের বুক চিরে পাকা পিচঢালা সড়ক। সড়কের দুপাশ জুড়ে সবুজ দিগন্ত। চৈত্রের কাঠপোড়া দুপুরের তীব্র রোদে মাথার ওপরে ত্রিপল টানিয়ে কাজ করছে গ্রামের কৃষাণীরা। পাশে বসে কাজের তদারকি করছে কৃষক। চৈত্রের ঝিরিঝিরি বাতাসের দোলায় নাকে ধাক্কা খায় স্নিগ্ধ কোমল ঘ্রাণ। ধনেপাতা গাছ দেখলে মনে হবে সবুজের গালিচা।

চড়া দামের আশায় নিয়মিত গাছের পরিচর্চা করছে তারা। কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে ধনেপাতা চাষ করছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ধনেপাতা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। রমজানে বাজারে ধনেপাতা বিক্রির আশায় নিয়মিত গাছের যত্ন নিচ্ছেন তারা। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তিন গ্রামে অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে।

শীতের শেষ সময়ে চাষিরা পতিত জমির আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কর্ষণ ও হালের মাধ্যমে ধনেপাতা চাষ শুরু করেন। চৈত্র মাস থেকে পুরোদমে চলে ক্ষেতের পরিচর্চা। কার্তিক মাসে ফসল তোলা শুরু হয়। এর মধ্যে ৪-৫ বার ফসল বিক্রি করা যায়। প্রায় সারা বছরই ক্ষেতে ধনেপাতা থাকে। ধাপে ধাপে বিক্রি করা হয় পাতা। চলতি বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। গ্রামগুলোয় ৬-৭ বছর ধরে এ ফসল চাষের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এক চাষির মুনাফা দেখে অন্য চাষিরা ধনেপাতা চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। ক্ষেতের মধ্য দিয়ে হাঁটলেও ধনেপাতা গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। গাছের নিচের ছায়ায়ও এ ফসল ভালো জন্মে। বাজারে প্রতি কেজি পাতা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাইকাররা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে ট্রাকের মাধ্যমে কয়েকশ মণ ধনেপাতা ঢাকার কাওরান বাজারে নিয়ে যায়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ মণ ধনেপাতা উৎপাদন করা যায় বলে জানান চাষিরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নাশেরা, দড়িনাশেরা, ফেটালিয়া ৩ গ্রামে অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় নতুন এ ফসল চাষে উৎসাহী হচ্ছে তারা। কৃষকরা তাদের স্ত্রী, বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সন্তান ও শ্রমিক নিয়ে ধনেপাতা ক্ষেতে কাজ করছে। কেউ ক্ষেতের ঘাস তুলছে, কেউ পাতা তুলছে আবার কেউ ঢাকা পাঠানোর জন্য প্যাকেট করছে।

সারা দিনের কাজ গুছিয়ে বাড়ির পাশে ধনেপাতা ক্ষেতে সময় দিচ্ছে পরিবারের সবাই। সবার কাজের জন্য চাষিকে দিতে হচ্ছে আলাদা মজুরি। যারা কাজ করেন তারা সবাই স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা। বাড়তি লাভের আশায় ধনেপাতা ক্ষেতে নিড়ানির কাজে ঝুঁকছেন স্থানীয় মহিলারা। দৈনিক তাদের ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।

ফেটালিয়া গ্রামের ধনেপাতা চাষি কেশব চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। দুই বছরের জন্য জমি লিজ নিয়েছি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। বীজ বপন, সেচ দেওয়া, নিড়ানি, কীটনাশক প্রয়োগ, পাতা তোলাসহ বিক্রির আগ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। আশা করি ১০-১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। বিনিয়োগ করা টাকা ঋণ করে বা সুদে সংগ্রহ করতে হয়। সুদমুক্ত ঋণ পেলে আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম।

একই গ্রামের চাষি জাবেদ আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খুব বেকায়দায় আছি। কোনো কৃষি কর্মকর্তা আমাদের ক্ষেতে আসে না। বীজ বপন করলে মাঝে মাঝে চারা উঠে না। ক্ষেতে অনেক রোগ দেখা দেয়। পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই। গাছের পাতা ও মূলে পচন ধরে, ক্ষেতের আংশিক অংশ সাদা হয়ে যায়, পাতা লালচে হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। কৃষি অফিসারকে না পেয়ে তখন আমরা নিজেরা বুঝে ওষধ দেই। তিন গ্রামে ৫০-৬০ বিঘা জমিতে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক ধনেপাতা চাষ করছে।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, কয়েকজন কৃষক ধনেপাতা চাষ করে। আমাদের কাছে প্রকৃত হিসাব নেই। আমি ওই এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বলছি কৃষকদের ক্ষেতে যাওয়ার জন্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক বলেন, ধনেপাতা দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তরকারি, আচার, চাটনির স্বাদ ও সুঘ্রাণ বাড়াতে এর বেশ কদর রয়েছে। তবে আমার জানা মতে উপজেলায় এত বৃহৎ আকারে ধনেপাতা চাষ হয় না। তবুও আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :