পারস্যের হালিম যেভাবে বাঙালির ইফতারে ঠাঁই নিল

রমজান মানেই হালিম। রমজানে ইফতারের অন্যতম পদ হালিম। যারা একবার হালিম চেখেছেন তারা বছরভর অপেক্ষায় থাকেন এই খাবারটিকে আরও একবার চেখে দেখার জন্য। যারা একেবারেই খাননি তাঁদের জানাই, মুসুর ডাল, মাংস, ঘি, বেরেস্তা, পাতিলেবু, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা-আদা কুচি দিয়ে রান্না করা একবাটি হালিম আর নান সামনে এলেই দেখবেন, খিদেটা যেন আপনা থেকেই পেটের ভেতর চনমনিয়ে উঠেছে।
পারস্যের কিংবদন্তি ডিশ হালিম সম্ভবত ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা খুসরোর হাত ধরে এদেশে চলে আসে। মোঘলরা পারস্য সম্রাটদের হারিয়ে ভারত দখল করার পর ভারত মহাদেশে মাটিতে জনপ্রিয় হয় খাবারটি।
ইতিহাস বলছে, পারস্য সৈন্যরা যুদ্ধে যাওয়ার আগে গম, গোস্ত, টকদই দিয়ে বানানো স্ট্যুয়ের মতো একটি খাবার খেতেন। যা পেট ভরিয়ে দিত ঝটপট। আবার শরীরে শক্তিও জোগাত। সেই খাবার হাতে হাতে বদলাতে বদলাতে হালিমে রূপান্তরিত হয়।
মুঘল আর হালিম ভারত মহাদেশে হালিমের ইতিহাস দীর্ঘ। এর জন্মদাতা সম্ভবত মুঘল আমল। দিকে ফিরে যায়। আইন-ই-আকবরীতে আবুল ফজল হালিমের উল্লেখ করে লিখেছিলেন, সম্রাট আকবরের দরবারে এই সুখাদ্য পরিবেশিত হত। এক বাটি মাংসের স্ট্যুতে থাকত গম, শালগম, গাজর, পালং হরিস বা মাংসের টুকরো।
হুমায়ুন গো-হত্যা নিষিদ্ধ করায় পরে এতে আর গোস্ত দেওয়া হত না। এবং তখন থেকেই নিরামিষ হালিমের চল ওঠে। আকবর এবং আওরঙ্গজেব-উবয়েই ছিলেন নিরামিষাশী। তাই তাদের আমলে জনপ্রিয় হয় নিরামিষ হালিম। তবে সেটিকেও পরিবেশন করা হত ভীষণ সুন্দর করে।
হায়দরাবাদ আর হালিম মুঘলরা তাঁদের শক্তি হারিয়ে ফেলে একসময়। আস্তে আস্তে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন আঞ্চলিক শাসকেরা। ভারতে রাজত্ব শুরু হয় ইংরেজদের। তখনই রাজশক্তির অভ্যর্থনায় পরিবেশিত হত হালিম। অবশ্যই রান্নার কায়দায় অদলবল ঘটিয়ে।
রকমারি হালিম হালিম ভেড়া, পাঁঠা, মুরগি এবং গরুর মাংস দিয়ে রান্না হয়। ইদানিং সবজি দিয়েও তৈরি হচ্ছে এটি। এছাড়া, হায়দরাবাদের বরকাস এলাকায় এক ধরনের মিষ্টি হালিমও পাওয়া যায়। ডালটিতে চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে তাকে ব্রেকফাস্ট হিসেবে খাওয়া হয়। পুরাণ বলছে, হালিমের জন্ম কারবালা যোদ্ধাদের খাবার হিসেবে। পরে এটি রমজানের ইফতারে যুক্ত হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এজেড)

মন্তব্য করুন