সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাঙন

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে সমুদ্র এখন উত্তাল। তারই ধারাবাহিকতায় টানা দুই দিনের জোয়ার ও প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাবরাং জিরো পয়েন্ট, শাহপরীর দ্বীপ ও মহেশখালী পাড়া নৌ-ঘাট সংলগ্ন অংশ।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার—এই দুই দিনে সাবরাং জিরো পয়েন্টের প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ফুট রাস্তা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। জিও টিউব দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা ঢেউয়ের আঘাত সামাল দিতে পারছে না। ফলে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি চাষের জমিতে ঢুকে পড়ে ফসলের ক্ষতি করছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, “শাহপরীর দ্বীপমুখী রাস্তায় ভাঙন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই অংশে সড়ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এতে কক্সবাজার-টেকনাফ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।”
চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বাঁধ নির্মাণ বা রক্ষা দেওয়াল না থাকায় সাগরের জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবারই মেরিন ড্রাইভ সড়কের কোনো না কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবার ভাঙনের মাত্রা বেশি হওয়ায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এর আগে গত ৩০ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আরেকটি গভীর নিম্নচাপের ফলে বাহারছড়া শীলখালী ও টেকনাফের মুণ্ডার ডেইল এলাকায় একই সড়কে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সেসময় স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ করলেও নতুনভাবে সাবরাং ও আশপাশের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় প্রতি বছরই একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এতে পর্যটন, কৃষি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙনরোধে টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, কেবল জিও ব্যাগ বা অস্থায়ী জিও টিউব দিয়ে ঝুঁকি কমানো সম্ভব নয়; প্রয়োজন পর্যাপ্ত বাজেট ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প।
এদিকে আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে এবং আগামী কয়েক দিন ঢেউয়ের তীব্রতা বাড়তে পারে। তাই ভাঙনের বিস্তার রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন রুট। প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটক এই সড়ক ব্যবহার করেন। তাই একে সচল রাখা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
(ঢাকাটাইমস/২৬ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন