শিকলে বাঁধা শিশুর জীবন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২০, ১৯:৩৩| আপডেট : ০৪ মে ২০২০, ১৯:৪৩
অ- অ+

নয় বছর ৩ মাস বয়সের শিশু শান্ত। জন্মের সময় শিশুটি শান্ত স্বভাবে বেড়ে উঠবে এমনাই প্রত্যাশা করে নাম রেখেছিল শান্ত। কিন্তু শান্ত তার বাবা মায়ের দেওয়া নামের বিপরীতভাবে বেড়ে উঠছেন। নাম শান্ত হলেও সে অশান্তের মতো আচরণ করে। যেটি বাবা-মার জন্য রীতিমতো কষ্টকর। শিশু শান্ত ৫ বছর ধরে দড়ি ও শিকলে বাঁধা জীবনযাপন করছে। শান্তের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ছাতিয়ান ইউনিয়নের কালিতলা এলাকায়। তার পিতা জসিম উদ্দিন একজন প্রান্তিক কৃষক। শান্ত এখন তার পরিবারের জন্য বোঝা।

শান্তের আচারণ সইতে পারে না তার পরিবারসহ প্রতিবেশীরাও। তাই শান্তকে রাত হলেই নির্জন বাঁশ বাগানে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে আসে। শান্তের চিকিৎসার খরচ চালাতে ব্যর্থ কৃষক জসিম উদ্দিন। ৫ বছর বয়স থেকেই তাকে গাছে শিকল ও দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে তার পরিবার।

শিশু শান্তের পিতা জসিম উদ্দিন জানান, আমার ছেলের বয়স বর্তমানে ৯ বছর তিন মাস। জন্মের পরে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে তিন বছর বয়সে তার অবস্থা বুঝতে পারি। সে প্রথমে রান্না ঘরের গোবরের দেওয়া লাঠি (গরুর গোবর দিয়ে তৈরি জ্বালানি) খেতে শুরু করে। বাড়ির পাশের ময়লা-আবর্জনা, মাটি, সাবানের ফেনা, কলা গাছ, কপির ডাটা, জামের বিচি, মুরগির পায়খানা, ড্রেনের বজ্র খেতে দেখে- আমি অবাক হই। এরপর আমি ২০১৪ সালে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। আমি পেশায় একজন দিনমজুর। বর্গা নিয়ে চাষ করি ও অন্যের জমিতে লেবার দিয়ে সংসার চালাই। ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারিনি।

তিনি আরো জানান, একবেলা ভাত জোটে তো অন্য বেলা জোটে না। ছেলেকে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই। শান্ত ঘুমাতে দেয় না। রাত ২টায় ঘুমায়। প্রতিবেশীদের রাতে ঢিল ছুঁড়ে। তাই দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা বাঁধা থাকে। আমার এই সন্তানের চিকিৎসা করার জন্য আমি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন করছি। আমার নগদ হিসাব নম্বর- ০১৯২৩০৭৪৭০৭। আমি বর্তমানে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।

শিশু শান্তের মা সিমা খাতুন জানান, সে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমার ছোট ছেলেকে একাধিকবার মেরে ফেলতে গিয়েছিল। নিজের সন্তানকে বাঁধা কোন মায়ের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব না।

শিশু শান্ত কারো সাথে কথা বলে না। তার নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারে না। নির্মমভাবে এই শিশুটিকে বেঁধে আর কতদিন বেঁচে থাকতে পারবে এই প্রশ্ন এলাকার সাধারণ মানুষের। তবে শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসী শান্তের চিকিৎসার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ছাতিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শান্তর প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করা হয়েছে। পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি ব্যাক্তিগতভাবে সাহায্যে করি। আসলে শান্ত একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু। এ লকডাউন উঠে গেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হবে।

মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়ার পরিপত্র আসলে তাহলে তাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৪মে/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাবনায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ: মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, হাসপাতালে ভর্তি ৫
বিএনপি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়: আমিনুল হক 
অভ্যুত্থানের পর সরকারের কর্তব্য ছিল শিক্ষাখাতের সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া: সাকি
৫ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা