শিক্ষার্থীদের ডিপ্রেশন ও মুক্তি

মুশফিক খান আকাশ
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২০, ০৯:১৯
অ- অ+

আমাদের দেশে মূলত শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা, আর কর্মক্ষেত্রের অব্যাবস্থাপনাকে ডিপ্রেশনের মূল কারণ ধরা হয়। আর মূলত কলেজ, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুণরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। আজকাল কিশোরদের মাঝে-ও এই বিষয় বিশেষ লক্ষনীয়। অনেক সময় তীব্র অবসাদ সহ্য না করতে পেরে এদের অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে । অনেক বিষয় আছে একজন মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ার। তবে আমাদের দেশে উপরোক্ত বিষয়গুলোই মূল কারণ তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে কিছু জিনিস না বললেই নয়।

গতবছরের কথা আমি মারাত্মক ডিপ্রেশনে ভুগছি আমার ক্যারিয়ার, ইউনিভার্সিটি লাইফের কিছু ট্র‍্যাজেডি নিয়ে। তো যা হতো আনমনে থাকতাম, মন খারাপ থাকতো, বন্ধু বান্ধবরা স্ট্রেস রিলিফ করাতে চেষ্টা করতো, কিন্তু সেরাকম কিছু হত না।

যা দেখতাম স্ট্রেস রিলিফ হত সংগঠনের কাজে, যেহেতু নাচ, অভিনয়ে, বিতর্কে ঝোক ছিলো, আমার সেগুলোতে ঢুকে গেলেই সব ডিপ্রেশন হারিয়ে যেতো।

বাসায় আসার পর যা হত, আমি মা বাবার মাঝখানে অনায়েসে শুয়ে পড়তে পারতাম। শুধু আমি না আমার আরো দুই ভাই আমরা সবাই এই কাজ করতে পারি। অনেকের মতে উচ্চবিত্তের সন্তানরা এগুলো করে তবে এমন ধারণা কেন তা বুঝে উঠিনা।

মা বাবাকে গড়গড় করে সব চাপা বেদনার কথা বলতাম, আর তারা সেগুলোর একটা একটা ব্যাখ্যা করে আমাকে শান্তি এনে দিত। মূলত এই অভ্যাস ছোটবেলা থেকে তারাই গড়ে তুলেছেন।

শুধু মা বাবা না পরিবারের অন্যরাও যেমন আমার বড় চাচী,বড় মামী, খালামনি একটু মন খারাপ বা আনমনে থাকলেই হাজার বার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? কি হয়েছে? তারপর কিভাবে যেন সব কথা শুনে ছাড়ে, এরপর ডিপ্রেশন কাটিয়ে তোলার জন্য মারাত্মক এক টোটকা বের করে।

শুধু তাই না আমার খুব কাছের একজন শিক্ষক, কয়েকজন সিনিয়র, এক প্রিয় বড় আপু এই স্ট্রেস কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সব থেকে বড় কথা আমি নিজেকে নিজে সাহায্যে করি, এই জানান দিয়ে আমি ভালো নেই। যা আমাকে প্রকাশ করতে শিখানো হয়েছিলো সেই ছোটবেলা থেকে।

এভাবেই আস্তে আস্তে খুব সহজেই অশান্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হই, কিছুদিন আগেও আত্মহত্যা করতে চাওয়া আমি।

আমার মনে হয় আমার মত অনেকেই এরকম ডিপ্রেশনে পরে নিজেকে চেপে রাখে কাওকে বলতে পারেনা চাপা বেদনায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

তরুণ আর কিশোরদের তো কথায় নেই এরা থাকে এক ঝুলন্ত অবস্থায় কি করবে,কাকে বলে একটু শান্তি পাবে, কোথায় যাবে, এরকম চিন্তায় উন্মাদ হয়ে যেতে হয়।

যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে,যান্ত্রিক শহরে শিশুদের মা বাবা উভয়েই কর্মক্ষেত্রে থাকায় তারা সব কিছু চেপে রাখতে শিখে যায়। তাই এখন সময় স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নতুন কোনো পদ্ধতির উদ্ভব ঘটানো।

আজকাল শিশুরা শিক্ষকদের সাথে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়, তো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষকদের ট্রেনিং করাতে হবে, আমার মতে সকল স্তরের শিক্ষকদের এটা বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাছাড়া মানুসিক স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছে অন্তত একজন এমন গ্র‍্যাজুয়েটদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা উচিত ।

সর্বোপরি আমি যা করি আমার আশে পাশের প্রতিটা শিশুকেই শিল্পে আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা চালাই। এবং বন্ধু হওয়ার প্রচেষ্টা করি যাতে তারা এখন থেকেই সব ধরনের কথা শেয়ার করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে যতটুকু সম্ভব শিশুদের গার্ডিয়ানদেরকেও বুঝাতে চেষ্টা করি। আমরা সকলেই পারি এরকম ছোট ছোট কাজ করতে।

সব কথার এক কথা, পারিবারিকভাবে মানুসিক দৃঢ়তা গঠন, পারিবারিক সুসম্পর্ক এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা একজন মানুষকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। অপরদিকে এটি আত্নহত্যার মতো ঘটনা রুখতেও বিশেষ কার্যকর।

সর্বোপরি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের পাশের মানুষটি ডিপ্রেশনে ভুগে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত যাতে না নেয়। তাই সবসময় এক বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে তাদের সাথে। এক গবেষণা বলছে, শুধু কথা চেপে রেখেই একজন ডিপ্রেশনের মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। মন খুলে একবার কথা বলতে পারলেই অনেকে এ কাজ করবে না।

এমন কেউ যদি থাকেন মারাত্নক ডিপ্রেশনে আছেন, চেপে আছেন সব কথা। আমার সাথে কথা বলার জন্য নিজেকে মুক্ত অনুভব করুন। আমাকে নক করুন আমি এখানে আছি আপনার যেকোনো ধরনের কথা শোনার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী ও প্রাবন্ধিক

ঢাকাটাইমস/২৯মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই কোটি টাকার মোবাইল ডিসপ্লে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১ 
লঙ্কান ঘূর্ণিতে ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারাল বাংলাদেশ
ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ৫ দাবিতে মেরিনার্স কমিউনিটির মানববন্ধন
কুমিল্লার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা