ঘরেই বাড়ান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ঝরান মেদ

করোনাকালে অনেকটা ঘরবন্দি জীবন। টুকটাক দোকান-বাজার বা ছুটখাট ছদ-বারান্দা-বাগান ছাড়া শরীর নাড়াচাড়া করার আর বিশেষ কোনো উপায় নেই। একেই একটানা চার দেয়ালের মধ্যে হাঁসফাঁস জীবন, তার ওপর মন খারাপ, সব মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধের বারোটা তো বাজছেই, পেটে-কোমরে মেদের পরে মেদ জমে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এই করোনাকালে সুস্থভাবে থাকতে হলে শরীরের শক্তি যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি ক্যালোরি কমিয়ে মেদ ঝরিয়ে তরতাজা থাকাটও জরুরি। এই সময় তাই শরীরচর্চাকে বাতিলের খাতায় ফেললে চলবে না মোটেও।
ফিটনেসের জন্য সঠিক এক্সারসাইজ দরকার এ কথা তো সবারই জানা। টানটান, ঝকঝকে চেহারা আর তরতাজা লুক পেতে নিয়মিত শরীরচর্চাই দরকার। শুধু কঠোর ডায়েটে কাজের কাজ হয় না। মেদ কমলেও শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করতে, পেশীর শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম একান্তই দরকার। ফিটনেস এবং শরীরচর্চা এই সাম্প্রতিক সময় সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ এখন অফিস, স্কুল-কলেজ যাওয়ার তাড়া নেই। সাত সকালে উঠে হুড়োহুড়ি নেই। গাড়িতে চাপার তাড়াও নেই। শুয়ে-বসে, রান্না করে খেয়েদেয়ে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে শরীরের অ্যাক্টিভিটি বলতে জিরো। শরীর যেহেতু সচল নেই, তাই মনও অচল হয়ে পড়ছে। মানসিক অবসাদ, একাকীত্বে নাজেহাল দশা। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে তাই মনকেও ফুরফুরে রাখার দরকার। সবকিছুর জন্যই শরীরচর্চাকেই তাই আগে রেখেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এখন কী ধরনের শরীরচর্চা করতে হবে সেই নিয়ে চিন্তা অনেকেরই। ইউটিউবে ভিডিও দেখে, ওয়েবসাইটে পড়াশোনা করে জটিল থেকে জটিলতর ব্যায়াম করতে গিয়ে হিতে বিপরীত না হয়ে যায় সেটাও দেখা দরকার। লকডাউনে এখন জিম বন্ধ। জায়গা বলতে ঘর, ছাদ, বারান্দা বা যাদের বাগান অথবা লন রয়েছে। প্রথমেই ভারী এক্সারসাইজ করে চটজলদি মেদ ঝরাবার ভাবনা বাতিল করাই দরকার। শুরুটা হোক হাল্কা ব্যায়াম দিয়ে, ধাপে ধাপে ব্যায়ামের সময় এবং পদ্ধতিতে বদল আসুক। তাহলেই ষোলোআনা কাজ হবে।
অ্যারোবিক এক্সারসাইজ পারফেক্ট ওয়ার্কআউট
হঠাৎ করে একদিন ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো আজ ২৫০ ক্যালোরি কমিয়ে ফেলব, শুরু হয়ে গেল ডাম্বেল নিয়ে লোফালুফি। তাতে কিন্তু ফল ভালো হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন দেখলে বোঝা যাবে, শরীরকে ওয়ার্ম করতে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করা ভালো। প্রতিদিন দশ মিনিট সময়ও যদি অ্যারোবিক এক্সারসাইজের জন্য রাখা যায় তাহলেই শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করা শুরু হয়। ব্যায়াম হবে এমন যাতে শরীরের নমনীয়তাও যেমন ধরে রাখা যাবে আবার পেশী শক্তিও বাড়বে।
অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে বোঝায় হাঁটা, দৌড়নো, স্পট জগিং,সাইকেল চালানো, বক্সিং, সিঁড়ি দিয়ে ওপর নিচ করা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। অনেক হাউজিং কমপ্লেক্সেই টেনিস কোর্ট থাকে। যদি নিয়মিত টেনিস খেলা যায় তাহলে শরীর খুব ভালোভাবে ওয়ার্ম-আপ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু না হলে ছাদে হাঁটুন জোরে জোরে, স্পট জগিং, স্পট স্কিপিং বা জাম্পিং জ্যাক করলে খুবই ভালো। এতে হার্ট ও ফুসফুস ভালো থাকে। দম বাড়ে, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয়। ডান্সিংও কিন্তু অ্যারোবিক এক্সারসাইজের খুব ভালো উদাহরণ। শরীর ফিট রাখতে অনেক জায়গাতেই অ্যারোবিক ডান্স ওয়ার্কআউট করানো হয়।
মেদ ঝরবে, শরীর ভেতর থেকে মজবুত হবে
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক যেভাবে বাড়ছে তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে না পারলে খুব মুশকিল। পেশীর শক্তি বাড়লে শরীর বাইরে থেকেও যেমন টানটান হবে, তেমনি ভেতর থেকেও হবে মজবুত। এই শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম অনেক রকম হয়। ওজন নিয়ে ব্যায়াম যাকে ওয়েট ট্রেনিং বলে আবার নানারকম স্ট্রেচিংও আছে যাতে শরীরের প্রতিটি পেশী ও পেশীসন্ধি সচল আর কর্মক্ষম থাকে। যাঁরা জিম করে অভ্যস্ত তাঁরা ওয়েট ট্রেনিংয়ের জন্য বাড়িতেই হালকা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। নানা রকম স্কোয়াট, লেগ রাইজিং, লেগ স্ট্রেচিং, পুশ আপ আছে। প্ল্যাঙ্ক তো গোটা শরীরের জন্যই ভালো। পেট, তলপেট, পায়ের ভাল ব্যায়াম হয়। মেদও ঝরে, শরীর টানটান থাকে। তবে এই সব এক্সারসাইজ করতে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই করা দরকার। কিছু না হলে হাতে দু’হাতে জলের বোতল নিয়ে জোরে জোরে হাঁটুন বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ছাদে হাঁটুন, এটাও ওয়েট ট্রেনিংয়ের একটা ঘরোয়া টোটকা।
শরীর-মন ভালো রাখে স্ট্রেচিং-ব্যালেন্সিং
ব্যালান্স ট্রেনিং অনেক রকম হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত। ব্যালেন্সিং বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং জানা থাকলে ভালো, না হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে গান চালিয়ে ধীরে ধীরে নাচাও কিন্তু স্ট্রেচিংয়ের মধ্যে পড়ে। মার্শাল আর্ট, জুম্বা জানা থাকলে নিয়মিত অভ্যাস করা ভাল। এই সময় তো বিশেষ করে। এতে শরীরের নমনীয়তাও ধরে রাখা যায়, মনও ভালো থাকে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের গাইডলাইন বলছে, সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৪৫ মিনিট সময় ধরেও যদি শরীরচর্চা করা যায় তাহলে যেকোনো ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমে। আর মেদ ঝরাতে হলে প্রতিদিনই অন্তত এক ঘণ্টা সময় রাখতে হবে শরীর চর্চার জন্য। সেই সঙ্গে ডায়েটে রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার। সারাদিনের সময়কে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে ঘরের কাজ ও শরীরচর্চার সময় বার করা উচিত। শরীর ফিট থাকলে সংক্রামক রোগে পড়ার শঙ্কাও কমবে।
শরীর চাঙ্গা থাকলেই পালাবে রোগ
নীরোগ শরীর মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। বর্তমানে যেভাবে সংক্রামক রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে, তাতে শরীরকে সবচেয়ে আগে শক্তপোক্ত করতে হবে। ইমিউনিটি বাড়লেই কাবু হবে যে কোনও সংক্রামক ব্যধি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত শরীরচর্চার সুফল অনেক। উচ্চরক্তচাপ কমবে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিরক্ত করবে না, হার্টের রোগ, বাতের ব্যথা সব গায়েব হবে।
নিয়মিত ব্যায়ামে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। টক্সিন দূর করে রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ট্রাইগ্লিসারাইড বা রক্তের ফ্যাট কমায়, শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়ায়। ভিটামিন সি হলো এমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানসিক অবসাদ কমে, স্ট্রেস ফ্রি থাকা যায়। তাহলে আর দেরি না করে শরীরচর্চা শুরু হোক বাড়িতেই। -ওয়েবসাইট
(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/জেবি)

মন্তব্য করুন