৪৯ বছর পর পেলেন বীর বিক্রম খেতাব

একাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানী হায়েনাদের ঘাঁটিতে গ্রেনেড হামলা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন রণাঙ্গনের বীর সৈনিক আবদুল খালেক। কিন্তু গ্রেনেড ছোঁড়ার আগেই আহত হন তিনি। শত্রুবাহিনীর একটা গুলি বুক ভেদ করে চলে যায় তার। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাত নম্বর সেক্টরের আরও বেশকিছু সম্মুখসমরে অংশ নেন তিনি। সেই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ‘বীর বিক্রম’ হিসেবে খেতাব বুঝে পেয়েছেন।
আবদুল খালেকের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল গ্রামে। বীর বিক্রম হিসেবে ১৯৭৩ সালেই তিনি গেজেটভুক্ত হন। ২০০৪ সালের সংশোধিত গেজেটেও তার নাম থাকে। বিষয়টি খালেক জানতে পারেন ২০১১ সালে। কিন্তু ওই গেজেটে তার ঠিকানা ছিল না। সংশোধন করার জন্য অনেকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু সাড়া পাননি। অবশেষে গেল ২৪ মার্চ খালেকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ নতুন গেজেট প্রকাশ হয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি এই গেজেট হাতে পেয়েছেন।
আবদুল খালেক ১৯৬৩ সালে যোগ দিয়েছিলেন নৌবাহিনীর একজন পেটি অফিসার (পিও) হিসেবে। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ১৯৬৯ সালে তিনি চাকরির ইস্তফাপত্র জমা দেন। তখন তাকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শর্ত দিয়ে বলেছিলেন, তাকে রিজার্ভ ফোর্সে রাখা হলো। দেশের প্রয়োজন পড়লে তাকে আবারও চাকরিতে যোগ দিতে হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবদুল খালেকের ডাক পড়ে। তিনি যান। কিন্তু যোগ দিয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী চলে আসেন। এখানে সাত নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় সম্মুখসমরে অংশ নেন। এর মধ্যে গোদাগাড়ীর খেতুর গ্রামে এক অপারেশনের সময় গুলি বিদ্ধ হন তিনি। বুকে গুলি লেগে বেরিয়ে যায় পিঠ দিয়ে। তবে খালেকের ভাগ্য ভালো। তিনি বেঁচে ছিলেন। পরদিন তাকে পদ্মা পার করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি করা হয় বহরমপুর হাসপাতালে। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ১০ ডিসেম্বর আবার ফেরেন রণাঙ্গনে।
আবদুল খালেকের ছেলে আবুল হাসনাত কচি জানালেন, তার বাবা আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পেতেন। কিন্তু তিনি দুঃখ করতেন, যে তার অধীনে যুদ্ধ করা কেউ কেউ খেতাব পেয়েছেন। অথচ তিনি খেতাব পাননি। তবে ১৯৭৩ এবং ২০০৪ সালের গেজেটেই তার বাবার নাম ছিল। সেটা অসম্পূর্ণ। ঠিকানা ছিল না। শুধু ‘নৌবাহিনীর নায়েক’ লেখা ছিল। ঠিকানা না থাকায় তার বাবাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বিষয়টি তারা জানতে পারেন ২০১১ সালে যখন জনতা ব্যাংক নিখোঁজ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করে। এরপর তারা যোগাযোগ করেন। জনতা ব্যাংক তাদের দুই লাখ টাকা আর একটি ক্রেস্ট দেয়। তারপর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বুঝে পেতে কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু বার বার কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার অযুহাত পাওয়া যায়। শেষে গেল বছর আবার আবেদন করি। এবার সংশোধিত গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এতে তার বাবাকে স্বীকৃতি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতিতে তার বাবা কিছুটা হলেও দুঃখ ভুলবেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান আখতার বলেন, আবদুল খালেক যে একজন লড়াকু সৈনিক ছিলেন সেটা জানতাম। কিন্তু তিনি যে খেতাব বঞ্চিত ছিলেন সেটা জানা ছিল না। এখন তিনি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। তাকে নিয়ে গর্ব আরও বেড়ে গেছে।
ঢাকাটাইমস/২৬জুন/পিএল

মন্তব্য করুন