ক্রেতার গচ্ছার টাকায় বস্তা ভরছে সিন্ডিকেট

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:১৬
অ- অ+

আবারো অস্থির হয়ে পড়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ পেঁয়াজ ভারত রপ্তানি বন্ধের পরদিনই খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি দাম সেঞ্চুরী ছুঁয়েছে। একদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দেশি এবং ভারতের পেঁয়াজ দ্বিগুণ দরে বিক্রি হয়েছে। সংকট না থাকলেও ক্রেতাদের একপ্রকার জিম্মি করেই অতিমুনাফার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হিসাবে বাজারে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। সেই হিসাবে গতকাল একদিনেই অতিরিক্ত দাম নেয়ার মাধ্যমে ভোক্তাদের পকেট থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার শ্যামবাজারের আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পেঁয়াজ নিয়ে এমন অস্থিরতার জন্য আমদানি উৎসে অতিনির্ভরতা, দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা ও বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বারবার এই ধরণের সংকটে যাতে ভুগতে না হয় সেজন্য এখনই দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ, ভর্তুকী দিয়ে দেশের কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ এবং পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এমন নৈরাজ্য চলতেই থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও বাজার বিশ্লেষক ড. সায়মা হক বিদিশার মতে, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে কমপক্ষে একমাস সময় লাগার কথা। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এভাবে দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের জিম্মি করার পেছনে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকাকে দষছেন এই অর্থনীতিবিদ।

ড. সায়মা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরপরই বাজারে দাম নিয়ে এমন অস্থিরতার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই ধরনের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে অন্তত এক মাস সময় লাগার কথা। কিন্তু একদিনেই বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে নৈরাজ্যের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকা, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত না হওয়া এবং বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকাই দায়ী।’

পেঁয়াজ নিয়ে বারংবার কেন সংকট হবে এমন প্রশ্ন রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, প্রায় প্রতিবছরই এমন সংকট তৈরী হচ্ছে তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চলমান সংকট নিরসন করতে হবে। এছাড়া এমন সংকট যেন তৈরি না হয় সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

নিজেদের বাজার সামাল দিতে ভারত গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। পরে দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। একসময় দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছেছিল। যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রায় পাঁচ মাস পর গত মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে ভারত। ১৫ মার্চ থেকে তা কার্যকর হয়।

কয়েকমাসের ব্যবধানে সোমবার আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়ার আনুষ্ঠানিক সংবাদের আগেই দেশের বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল থেকে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের ঝাঁঝ।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে দাম

গত কয়েক দিন কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এরমধ্যে ভারত রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আশঙ্কা করা হয়েছিল পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে। সকাল হওয়ার পর সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। কারণ সোমবার যে পেঁয়াজ পাইকারি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় কিনেছেন, গতকাল সেই পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০টাকা দিয়ে।

শ্যামবাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে নাজিরা বাজারে বিক্রি করেন আব্দুল খালেক। ক্ষুব্ধকণ্ঠে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, সোমবার সব থেকে ভালো পেঁয়াজ ৫২ টাকায় কিনে ৬০ টাকা বিক্রি করেছি। আজকে সব আড়তে ৭২ টাকা। খরচসহ প্রায় ৮০ টাকা পড়বে কেজি। বিক্রি করতে হবে ৯০ টাকা। এতে তো মানুষের সঙ্গে মারামারি হবে।’

এই খুচরা বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিনের মত আজকেও তিন বস্তা পেঁয়াজ কিনেছি। সকালে দুই বস্তা কিনেছি ৬৫ টাকা করে। পরে আরেক বস্তা কিনলাম ৭২ টাকা কেজি দরে। মাঝে সময় দুই ঘণ্টাও গ্যাপ হয়নি।

এসময় পাশে আরেক রিকশায় পেঁয়াজের বস্তার উপরে বসা একজন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কেনার রসিদ দেখান প্রতিবেদককে। তিনিও বলেন, সব আড়তে পেঁয়াজ ভরা। আর এরা কয় (বলে) পেঁয়াজ নাই। তাই দাম একটু বেশি। কেউ কি দেখার নাই?

ঢাকার শ্যামবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গড়ে দেশি ও বিদেশি পেঁয়াজের ২০ থেকে ৩০ ট্রাক পেঁয়াজবাহী ট্রাক এই বাজারে আসে। আমদানি বেশি হলে কখনো ১৫ টনের অর্ধশতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ এখানে বিক্রি হয়। সে হিসেবে শ্যামবাজারে কমপক্ষে প্রতিদিন ৩শ টন পেঁয়াজ বিক্রি করেন শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী।

শ্যামবাজারের আল মক্কা বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. ইউনুস হাওলাদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, সোমবার পর‌্যন্ত ভারতের পেঁয়াজ ৩৫টাকা দরে আর দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজকে ভারতেরটা ৬০ টাকা ও আর দেশিটা ৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। ৮২ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। সামনে কি হবে এখনো জানি না।

বাজার দরের একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন শ্যামবাজারের রফিক ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুই একদিনের মধ্যে একশ ছাড়াবে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার।’

এদিকে খাতুনগঞ্জের একজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের ধারণা অনুযায়ী আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। সে হিসেবে একদিনে বাড়তি দামের কারণে অনেক বড় অংকের টাকা বেশি খরচ হয়েছে পেঁয়াজের পেছনে।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রণবীর-ইয়াশের ‘রামায়ণ’: ১৬০০ কোটি রুপি বাজেটের ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা
শিক্ষার্থীদের জন্য ডুয়ার অফিস সবসময় খোলা: দুদু
টঙ্গীতে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরিকালে রোহিঙ্গা আটক
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ৮- নীলার গর্ভে তমালের চিহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা