উত্তরাঞ্চলের শ্রমজীবী নারীরা এখনও অবহেলিত

দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য এবং নারী নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। নারী-নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম-অধিকার নিয়ে সভা-সেমিনার হলেও বাস্তবে নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ নির্যাতন সহ্য করছে। জীবন-জীবিকার তাগিতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে-ময়দানে হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও মিলছে না সমান মজুরি।
এ অঞ্চলের নারীরা এতটাই পিছিয়ে যে, অনেকে জানেনই না নারী দিবস কি?
গত সোমবার দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো নির্যাতনের শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সেইসঙ্গে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্যের চিত্র। নারীরা তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা।
তাদের অভিযোগ, তারা মাঠে-ঘাটে, ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করলেও নারীরা সমান মজুরি থেকে বঞ্চিত।
নারীদের সুরক্ষা ও ন্যায্য অধিকার (মজুরির) নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ভাবেই আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না বলে একাধিক নারী শ্রমিক ক্ষোভের সঙ্গে জানান। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা কম মূল্যে মাঠে-ঘাটে কাজ করেই যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। স্থানীয়ভাবে একদিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু, নারী সমান কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
নারী শ্রমিকরা বোরো চারা রোপণসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের পরিচর্যা, মাটি কাটা, চাতাল, ইটভাটায় ও রাজমিস্ত্রীর কাজও করছেন। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে তাদের একদিনের কাজ ধরা হয়।
বিরল উপজেলায় পলাশবাড়ী গ্রামে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘নারী দিবস কি আমরা জানি না। আর নারী দিবস পালন করলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা জানি কাজ করলে পেটে ভাত, কাজ না করলে থাকতে হবে উপবাস। তাই জীবন বাঁচার তাগিদে কাজে বেড়িয়েছি।’
ধুলাতৈর গ্রামের সখি বেগম বলেন, ‘আমরাও সকাল ৮/৯টা বাজলেই পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে যাই। কাজ থেকে ফিরে আসি একই সময়ে, কিন্তু পুরুষরা দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা পেলে আমরা পাই ২০০ টাকা। সমান টাকা চাইলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নারীরা যেন সমান মজুরি পায়, এ জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।’
নারী শ্রমিক সবেদা বেওয়া বলেন, ১‘৩ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। অনেকে কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কোনো রকমে এক সন্তান নিয়ে সংসার চলছে। তাই শ্রমিকের কাজ করি। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করে। কাজের মধ্যে পুরুষরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও নারী শ্রমিকরা তেমন বিশ্রামের সুযোগ পায়না। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মজুরি পেলে আমরা পাই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ।’
বেসরকারি নারী উন্নয়ন সংস্থার নেত্রী শামিমা পপি বলেন, ‘নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি,বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ শ্রমিকরা মাটি কেটে দেন, সেই মাটি বহন করেন একজন নারী শ্রমিক। তারপরও নারী শ্রমিকরা বেশি মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বৈষম্য দূর করতে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা খুবই জরুরি। সেইসঙ্গে অতি জরুরি ভিত্তিতে নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
নারী উদ্যোক্তা শামসুন নাহার বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। সরকার নারী-নির্যাতন বন্ধসহ নারীদের উন্নয়নসহ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।’
(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/পিএল)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

আ.লীগ নেতার বাড়িতে ব্যবসায়ীর লাশ: দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের শাহাদাতবার্ষিকী পালিত

কক্সবাজারে ফের বন্যহাতির মৃত্যু

রিমান্ড শেষে কারাগারে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল

জয়পুরহাটে ট্রাক্টর -মাইক্রোবাস সংঘর্ষ, নিহত ১

সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি

এনটিভির ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলায় অভিযুক্ত সাকিব গ্রেপ্তার

চালকসহ চালের ট্রাক উধাও

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের জন্য করোনা টেস্টিং বুথ
