ক্যান্সার জয়ী সাবিনা ইয়াসমিনের দিনকাল, জানুন কবীর সুমন সম্পর্কেও

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২১, ১৫:৩৩
অ- অ+

বাংলা গানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন। ক্যারিয়ারে ১২ হাজারের মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। অর্জন করেছেন নামিদামী দেশি-বিদেশি বহু সম্মাননা। ৬৬ বছর বয়স হলেও এখনো জাদুকরী কণ্ঠে মুগ্ধ করছেন সব শ্রেণির গানপ্রেমী মানুষকে।

২০০৭ সালে প্রতিভাবান এই গুণী শিল্পীর শরীরে মরণব্যাধী ক্যান্সার ধরা পড়ে। সংবাদটি জানার পর ভেঙে পড়েননি তিনি। মনকে শক্ত রেখে, অসংখ্য ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীর দোয়া ও ভালোবাসায় ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন।

করোনাকালে কেমন আছেন সেই গানের মানুষটি? এক যুগেরও বেশি আগে ক্যান্সার জয়ের পর তার দিনকালই বা কীভাবে কাটছে। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে।

ঢাকা টাইমসকে কিংবদন্তি এই শিল্পী বলেন, ‘ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছি তো প্রায় এক যুগ হয়ে গেল। কিন্তু এখনো নিয়মিত চেকআপ করাই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলি।’

করোনাকালে সুস্থ আছেন জানিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার সমসাময়িক অনেকেই তো চলে গেলেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। সেটাই করছি। সারাক্ষণ বাসায় সময় কাটাচ্ছি। রোজা রাখছি, নামাজ পড়ছি। পাশাপাশি গানের চর্চাটাও চালু রেখেছি। যেহেতু আমি গানের মানুষ।’

একসময়ের তুমুল ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে এখন খুব কমই দেখা যায় মাইক্রোফোনের সামনে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনকার সিনেমায় যে ধরনের গান হয় তাতে আমাকে খুব একটা প্রয়োজন হয় না। আমাদের সংগীত জীবনে আমরা যে ধরনের গান গেয়ে এসেছি, সেই ধরনের সামাজিক সিনেমা এখন খুব একটা তৈরি হচ্ছে না। তাই গান গাওয়াও তেমন হচ্ছে না।’

২০০০ সালে ভারতের বিখ্যাত সুরকার, গায়ক, গীতিকার, লেখক ও রাজনীতিবিদ কবীর সুমনকে বিয়ে করেন সাবিনা ইয়াসমিন। যিনি ওই বছর শুধু সাবিনা ইয়াসমিনকে ভালোবেসে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে হয়ে যান কবীর সুমন। তিনি এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন? এমন একটি প্রশ্নও কথা হয় সাবিনা ইয়াসমিন। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

জানা যায়, সাবিনা ইয়াসমিন অনেক আগে থেকেই কবীর সুমনের সঙ্গে থাকছেন না। মেয়ে ফাইরুজ ইয়াসমিন ও ছেলে শ্রাবণের সঙ্গে তিনি থাকেন ঢাকায়। অন্যদিকে, কবীর সুমন রয়েছেন তার দেশ ভারতে। দিন কাটে তার সংগীতের চর্চা করে।

কবীর সুমন ১৯৪৯ সালের ১৬ মার্চ ভারতের উড়িষ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি রেডিও জার্নালিস্ট হিসেবে ডয়েচে ভেলেতে কাজ করেন। এরপর কাজ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। এছাড়া ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে কেরানি হিসেবেও কাজ করেছেন একসময়। পরবর্তীতে তিনি পথচলা শুরু করেন গানের জগতে।

সংগীত জীবনের প্রথম পর্যায়ে ‘নাগরিক’ নামে কলকাতার একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কবীর সুমন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই একটা ব্যান্ড খুলে বসেন। নাম দেন ‘সুমন দ্যা ওয়ান ম্যান ব্যান্ড’। তিনিই সে ব্যান্ডের একমাত্র সদস্য। তার কনসার্টে কোনো যন্ত্রশিল্পীর প্রয়োজন পড়ে না। তিনি একইসঙ্গে গিটার, হারমোনিকা ও কিবোর্ড বাজিয়ে গান করেন।

কলকাতায় সুরকার হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় কবীর সুমন। সুরকার হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার সুরে সাবিনা ইয়াসমিনও একাধিক গান গেয়েছেন। এছাড়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু অঞ্জন দত্তের অনুরোধে ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’সহ কিছু ভারতীয় বাংলা সিনেমাতে অভিনয়ও করেছেন সুমন।

অন্যদিকে, সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায়। কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমিন তার আপন বোন। বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে ছোট থেকেই দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে গান শিখতেন সাবিনা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নেন।

মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন সাবিনা ইয়াসমিন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও-টেলিভিশনে গান করতেন নিয়মিত। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গান দুটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারও আগে ‘নতুন সুর’ নামে ছবিতে প্রথম গান করেন শিশু শিল্পী হিসেবে।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউই এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দের সঙ্গেও তিনি গান গেয়েছেন।

মায়াবী কণ্ঠ দিয়ে বাংলা সংগীতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন, তার পুরস্কারও পেয়েছেন দুহাত ভরে। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে পান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতের ওপর লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি।

এছাড়া ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার ও উত্তম কুমার পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার এবং একই বছর নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবে সাবিনা ইয়াসমিনকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা।

সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এছাড়া এ গানটিসহ কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির মোট চারটি গানে সুরও দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।

ঢাকাটাইমস/০৯মে/এএইচ/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকায় এক্সিকিউটিভ স্টাডি আব্রোড আয়োজিত অস্ট্রেলিয়ান এডুকেশন এক্সপো
নববর্ষ উৎসব হিসেবে মহররম উদযাপন: ইসলামের আদর্শবিরোধী চক্রান্ত
পিএসজির বিরুদ্ধে এমবাপে মামলা করলেন
হঠাৎ তেহরানে একের পর এক বিস্ফোরণ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা