আন্তর্জাতিক যুব দিবস ও তরুণদের ভাবনা

তপন চন্দ্র রায়
  প্রকাশিত : ১২ আগস্ট ২০২১, ২১:০৪
অ- অ+

আজ ১২ আগস্ট। আন্তর্জাতিক যুব দিবস। একটি দেশের বিদ্যমান যুবশক্তিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, শৃঙ্খলা ও শান্তি, সামাজিক সংহতি, সুবিচার ও সহনশীলতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দিবসটি সারা বিশ্বে পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের 'ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার রেসপনসিবল ফর ইয়ুথ' পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত হয় এবং এখানেই ১২ আগস্টকে 'আন্তর্জাতিক যুব দিবস' হিসেবে উদ্যাপনের প্রস্তাব করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আজকের যুবকদের সংঘবদ্ধভাবে এ পৃথিবীর ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এবং সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনে নিরলস কাজ করে যেতে হবে । ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৩০ বছরে এ পৃথিবীর জনসংখ্যা দুই বিলিয়ন বাড়বে এবং এ বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে তা খুবই বিপদজনক হবে। এজন্য জাতিসংঘের পরিকল্পনায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, যুব সমাজে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর-কিশোরী অপরাধ, অবসরের কর্মকাণ্ড, বালিকা, যুব, মহিলা এবং সমাজ জীবনে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুবকদের পূর্ণ এবং কার্যকর অংশগ্রহণ বিষয়কে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এর একটি উক্তি হচ্ছে, ‘আমরা সবসময় আমাদের তরুণদের জন্য ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারি না, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা আমাদের তরুণদের গড়ে তুলতে পারি।’

বাংলাদেশে জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত তরুণদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও তৎপরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণজাগরণসহ দেশের যেকোনো ক্লান্তিলগ্নে আমাদের যুবসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত রেখেছে। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের বৃহত্তর এ তরুণ জনগোষ্ঠীকে তাদের সততা, দক্ষতা, দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ প্রণয়ন করেছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫-৪৯ বছর বয়সী জনসংখ্যার পরিমাণ মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এ বিপুল পরিমাণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণেই এ করোনা মহামারিতেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় সচল রয়েছে। কিন্তু যে সকল শ্রমিকের কারণে এ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে তারা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। অনেক সময় তারা তাদের পাওনা বেতন ঠিকমত না পাওয়া, কর্মক্ষেত্রে তাদের সামাজিক ও জীবনের নিরাপত্তা অনিশ্চয়তা, পুষ্টিকর খাবারের অভাব, স্বাস্থ্যবিমার আওতায় না থাকাসহ বিভিন্নভাবে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যে কারণে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তাদের সুষ্ঠু ও সঠিক দক্ষতার বিকাশ অনেকাংশে হয়ে ওঠে না। বর্তমানে যুবক সমাজ যদি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টি, তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিকর খাবার সরবরাহে সহায়তা করে এবং অন্যান্য দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যুব সমাজ রুখে দাঁড়ায়, সেটা হবে দেশের জন্য আরেক নতুন অধ্যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন গেমস সহ অন্যান্য ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে এ যুব সমাজের একাংশ আজ যেভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে কী হবে সে কথা বলা সত্যিই কঠিন। আমাদের যুবকরাই আমাদের দেশের প্রধান সম্পদ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ। এদের উন্নয়নে ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারকে আরও পরিকল্পিত দৃষ্টি দিতে হবে।

লেখক: সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রেসিডেন্ট, UNI Bangladesh Liaison Council Youth Committee

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশ ছেড়ে পালালেন ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিক, বন্ধ অফিস-ওয়েবসাইট
বিদেশ মানেই বেহেশত নয়: আসিফ নজরুল
৩৭তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের নেতৃত্বে বাসার-মেহেদী
ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা