যে কারণে ইরিত্রিয়ায় দূতাবাস বন্ধ করতে বাধ্য হলো ইসরায়েল

ইসরায়েলের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়ায়ির লাপিদ আফ্রিকার শৃঙ্গ বলে পরিচিত ইরিত্রিয়ায় দেশটির দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রায় দু'বছর ধরে এখানে ইসরায়েলের কোনো রাষ্ট্রদূত ছিল না। সর্বশেষ ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ২০১৮ সালে ইরিত্রিয়া ছেড়ে যায় এবং এর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতে পারেনি বর্ণবাদী ইসরায়েল। গত জুলাই মাসে ইসরায়েল সেখানে এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত বলে নিয়োগ দিলেও ইরিত্রিয়ার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। ইরিত্রিয়াতে ইসরায়েলের এ কূটনৈতিক পরাজয়ের কারণ কী?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণের তীব্র বিরোধী ইরিত্রিয়ার জনগণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইহুদিবাদী ইসরায়েল আমেরিকার সহায়তায় আফ্রিকার ও আরবের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় পাশ্চাত্যের সেবাদাস গোছের কয়েকটি আরব সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়। এই সরকারগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার আরব আমিরাত ও বাহরাইন এবং আফ্রিকার সুদান ও মরক্কো সরকার।
ইসরায়েল এ অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে থাকায় এইসব সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অন্য সরকারগুলোকেও নিজের দিকে আকৃষ্ট করার আশা করছিল।
কিন্তু এ অঞ্চলের জনগণ অবৈধ, বর্ণবাদী ও মুসলমানদের প্রথম কিবলাসহ প্রায় গোটা ফিলিস্তিনের দখলদার শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবল বিরোধী। যেমন, মিশরের জনগণ ২০১১ সালে কায়রোস্থ ইসরাইলি দূতাবাসে হামলা চালালে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত রাতের আঁধারে মিশর ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাহরাইনের জনগণও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে দেশটির স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। ঠিক তেমনি ইরিত্রিয়ার সরকার ও জনগণ ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবল বিরোধিতা অব্যাহত রাখায় ইসরাইলের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়ায়ির লাপিদ আসমারায় তথা ইরিত্রিয়ার রাজধানীতে ইসরাইলি দূতাবাস বন্ধ করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরায়েল সর্বশেষ ইশমায়েল খালদি নামে এক কূটনীতিকে ইরিত্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু আসমারা সরকার তার নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করতে দেরি করছে। এ কারণে গত শনিবার ইসরাইলের কূটনৈতিক মিশন বন্ধের নির্দেশ দেন লাপিদ।
২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই দূতাবাসের নিরাপত্তা কর্মীই ছিল ইসরাইলের একমাত্র প্রতিনিধি! দীর্ঘকাল ধরে ইরিত্রিয়া থেকেও কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরাইল সফরে যাননি। আফ্রিকার এই দেশটিতে ইসরাইলের সম্পত্তি বলতে যা রয়েছে তা হল খালি পড়ে থাকা ইসরাইলি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের শূন্য বাসভবন এবং তার গাড়ি চালকের শূন্য ঘর! স্থানীয় একদল নিরাপত্তা-কর্মীর বেশিরভাগই এখন এইসব ভবন পাহারার কাজ বাদ দিয়ে নিজ নিজ বাসভবনেই থাকছেন।
ইরিত্রিয়ায় ইসরাইলি দূতাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফ্রিকার শৃঙ্গ বলে পরিচিত অঞ্চলে ইসরাইলি স্বার্থ বিপদের মুখে রয়েছে। -আইআরআইবি।
ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/ইএস

মন্তব্য করুন