কারসাজিতে লাগামহীন ডলারের রেকর্ড মূল্য

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৯
অ- অ+

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো উদ্যোগই দমাতে পারছে না ডলারের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। খোলাবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে টাকার মান গিয়ে ঠেকছে তলানীতে। বুধবার ডলারের দাম ওঠে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়।

আগের দিন এক ডলার কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছিল ১১৫ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম ৫ টাকা বেড়ে হয়ে যায় ১২০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৫ টাকা বেশি।

রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, গুলশান এলাকায় বেশ কিছু মানি এক্সচেঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত পরিদর্শনের ভয়ে বাজারে কমে গেছে অবৈধ ডলার বিক্রেতাদের সংখ্যা। আবার অনেকের কাছে ডলার থাকলেও ভয়ে তা খোলাবাজারে বিক্রি করতে আসছে না।

এ ছাড়া অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে চাহিদা অনুযায়ী ডলার নেই বলে জানা গেছে। এসব কারণে ডলারের দাম বেড়েই চলছে।

বিসমিল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা জাফর আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) ডলারের চাহিদা বেশি। সকাল থেকে দামও ঊর্ধ্বমুখী। দুপুরের পর ১১৯.৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করেছি প্রতি ডলার।’

নিজেদের্ কাছে বিক্রি করার মতো ডলার না থাকলেও পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা ইমন চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, যাদের কাছে আছে তারা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার দিতে পারছে না।

ব্যাংকে গিয়েও ডলার না পেয়ে দিলকুশার দোহার মানি এক্সচেঞ্জে যান এক ক্রেতা। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রতি ডলার ১২০ টাকা চাচ্ছে। অথচ ব্যাংকরেট ৯৫ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বলে, ওসব বলে লাভ নেই। প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ডলারের ম্যূল আরও বাড়তে পারে জানান একটি মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ডলারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই সকাল থেকে দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সকালে ১১৭ টাকায় বিক্রি করলেও দুপুরে ১২০-এ হয়েছে। কাল (বৃহস্পতিবার) ১২০ টাকা অতিক্রম করার সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।

বাজারে ডলারের এমন সংকট কেন। ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয় বলে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন।

খোলাবাজারে এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা ডলারের বর্তমান সংকটের বড় কারণ বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

মুখপাত্র বলেন, ‘যারা খোলাবাজারে ডলারের অবৈধ ব্যবসা করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে। আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। ডলার নিয়ে কারসাজি করলে যে কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ব্যাংকের মতো খোলাবাজারেও ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে, যা মানুষের মনে ডলার নিয়ে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম।

ঢাকা টাইমসকে ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে চাহিদানুযায়ী ডলারের তীব্র সংকট রয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার কিনে রাখছেন। অনেকে আবার ডলার নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবসাও করছেন। এতে তৈরি হচ্ছে আরও ঘাটতির।’

তবে প্রবাসী আয়ে সুখবর আসছে বলে জানান ড. আইনুল ইসলাম। আর তাতে বর্তমান পরিস্থিতি খুব শিগগির স্থির হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

ডলারের সরবরাহ কমার কারণ হিসেবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার ফলে অনেকে প্রবাসী এখন দেশে আসতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিদেশি পর্যটকও কম আসছেন। এ কারণে ডলারের সরবরাহ কম।’

এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বা‌ড়ি‌য়ে‌ বি‌ক্রি ক‌রার প্রমাণ পাওয়ায় গত সোমবার দে‌শি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভা‌গের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অপসারণ কর‌তে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া ডলারের কারসা‌জি রো‌ধে খোলাবাজার ও এক্স‌চেঞ্জ হাউজগু‌লো‌তে ধারাবা‌হিক অভিযান পরিচালনা ক‌রছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডলার তো কোনো কাঁচামাল নয় যে মজুত করে অতিরিক্ত মুনাফা করবে। ডলার কেনাবেচায় দামের পার্থক্য ন্যূনতম করে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার অস্থিতিশীল করলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা পর্ষদ কাউকেই ছাড় দেওয়া উচিত হবে না মন্তব্য করেন তিনি।

চলতি বছর কয়েক দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। গত ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। ৯ জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে ডলারের দাম। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে ডলার সংকট।

পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়।

এরপর জুন-জুলাইয়ে বারবার দাম বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ বুধবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু খোলাবাজারে বুধবার এর চেয়ে ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডলার।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/বিএস/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
Reimagining Management Education: The Role of Quantum Mechanics as a Metaphorical Lens for Complex Leadership
চরফ্যাশনে ১৪ কোটি টাকার অবৈধ জাল ও পলিথিন জব্দ
রক্তাস্বল্পতা দূর করে প্রাকৃতিক মহৌষধ ভেষজ আমড়া, ক্যানসার প্রতিরোধও সিদ্ধহস্ত
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪১ জন ফিলিস্তিনি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা