জনমনেও ১০ ডিসেম্বরের উত্তাপ, বিএনপির সমাবেশের স্থান নিয়ে অনড় দুই পক্ষই

কাজী মুস্তাফিজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৪:১০ | প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৩:৪৭

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এই দিনটিতে ঢাকায় গণসমাবেশ করে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি সমাপ্ত করতে চায় বিএনপি।

তবে বিএনপির এই গণসমাবেশ রাজধানীর কোথায় হবে, সমাবেশের স্থান নিয়ে জনমনে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। কারণ বিএনপি বলছে, নয়াপল্টনেই তারা সমাবেশ করবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে।

বিএনপি এরই মধ্যে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট ও ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

তবে ঢাকায় সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ নিজেদের বক্তব্যে অনড় অবস্থানে থাকায় ফলে ১০ ডিসেম্বর এলেই ঢাকায় কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে বেশ উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। যদিও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করতে অনুমতি দিয়ে পুলিশ ২৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে শর্তযুক্ত এই অনুমতির খবরের পরপরই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আর আওয়ামী লীগ বলছে ‘বাড়াবাড়ি’ করলে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি। এত আগেই প্রধান দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান দেশের রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে যায়—এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জল্পনাকল্পনা। রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ লাগছে জনমনেও।

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের স্থানকে কেন্দ্র করে সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রধান দুই দলের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।

পরদিন মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দেয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে ২৬টি শর্ত উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়।

এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে ঘিরে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে, তাতে ক্ষমতাসীন এই দল এবং বিএনপির মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপিকে যে সহজে ছাড় দেওয়া হবে না, সে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে।

ইতোমধ্যে ‘সতর্ক পাহারার’ নামে আওয়ামী লীগ ঢাকাকে মোটামুটি অবরুদ্ধ করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবেন। বিএনপিকে শান্তি নষ্ট করার সুযোগ দেওয়া হবে না।

ঢাকার বাইরের বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে বাধার মুখেও বেশ বড় জমায়েত দেখাতে সফল হয়েছে বিএনপি। এসব সমাবেশ দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব তৈরি করেছে। তবে ঢাকায় ব্যর্থ হলে কর্মীদের সেই চাঙাভাবে ভাটা পড়বে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ এটাই করতে চাইছে। এ জন্য ক্ষমতাসীন দলটি কয়েক স্তরের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতো দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, বিএনপি ঢাকায় কোনো ঝামেলা করলে হেফাজতে ইসলামকে মতিঝিল থেকে যেভাবে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এর চেয়ে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর মঙ্গলবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির নির্বিঘ্ন সমাবেশের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে আনা সত্ত্বেও তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, বাড়াবাড়ি করা হয়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে গণসমাবেশ করতে মঙ্গলবার বিএনপিকে দেওয়া পুলিশের ২৬টি শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তেই বলা আছে—‘এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।’

আর পুলিশের শেষ বা ২৬ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে—‘জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।’

ডিএমপি থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলটি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ মূলত জনস্বার্থের সমাবেশ। এটি হারানো গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সমাবেশ। নয়াপল্টনেই বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে বলে জানান বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমরা নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করবো। নয়াপল্টনে আগেও সমাবেশ হয়েছে এখনও হবে। এমনকি ভবিষ্যতেও নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করবে।’

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি অনুমতি চেয়েছে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদি তারা না মানতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার।’

(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :