কাজের খোঁজে ঢাকায়, সারাদিন রোদে পুড়ে ফিরলেন বাড়ি

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২১ | প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৭

সারাদিন ঢাকার তীব্র রোদে-গরমে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর মো. হাসেম বেপারী। তবুও কাজের খোঁজ পাননি। অবশেষে মন খারাপ করে রওয়ানা হয়েছেন বাড়ির পথে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে তার বাড়ি পৌঁছতে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। খালি হাতে বাড়ি গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের কী বলে বুঝ দেবেন তা জানা নেই তার।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় হাসেম বেপারীর। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিল কষ্টের ছাপ। হাসেমের মতো ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে রূপ, লাবণ্য, সৌন্দর্য, আনন্দ সবকিছুই মূল্যহীন। কারণ, ক্ষুধার জ্বালা যে বড় জ্বালা! সেই জ্বালা মেটাতেই ঢাকায় আসেন হাসেম বেপারীরা।

হাসেম বেপারীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জ। সপ্তাহে তিন দিন কাজের সন্ধানে তাকে আসতে হয় ঢাকায়। এজন্য রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে চড়েন রাজধানীর উদ্দেশ্যে।

সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসেম বেপারীকে। সংসারের হাল ধরে রাখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের কাজ করেন। রাজধানীতে কাজের চেয়ে দিনমজুরের সংখ্যা বেশি। এদের বেশির ভাগই ভবন ঢালাই, ইট ভাঙ্গা ও টাইলস পুডিং করার কাজসহ কুলির কাজে জড়িত। এক দিন কাজ জুটলে দুই দিন থাকতে হয় বেকার।

মো. হাসেম বেপারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার মা নাই, বাপ নাই। তারা ছোট বেলায় মারা গেছেন। চারজনের সংসার চালাতে পারছি না। আমার বয়সও তো কম হয়নি। আজ ঢাকায় আসছিলাম কাজের সন্ধানে। সঙ্গে ১০০ টাকা নিয়ে আসছি। কিন্তু গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ করে আছে মাত্র পাঁচ টাকা। কিন্তু এখনো কাজ পাইনি।’

চোখেমুখে কষ্টের ছাপ নিয়ে মো. হাসেম বেপারী জানান, ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক কেনাবেচা চলে। দিনমজুর হিসেবে শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষায় থাকেন অনেকে। চলে দরকষাকষি। এর মধ্যেই কেউ কাজ পান, কেউ পান না।

হাসেম বেপারী বলেন, আমি নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি বলে আজকে আমি মানুষের কাছে বিক্রি হচ্ছি। আমার স্বপ্ন আমার ছেলে মেয়েকে কষ্ট করে হলেও পড়াশোনা করাবো। আমার মতো যেন আমার ছেলে মেয়ে কষ্ট করতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করেই যেন আমি মারা যাই।

হাসেম জানান, হার্টের সমস্যা হওয়াতে বেশি ভারি কাজ করতে কষ্ট হয়। তারপরও বাধ্য হয়ে কাজ করেন। যে কাজই পান তিনি সেটাই করেন। এর মধ্যে রয়েছে- মানুষের বাজারের ব্যাগ বাসায় পৌঁছে দেওয়া, বাস থেকে মানুষ নামলে ভারি ব্যগ গাড়িতে তুলে দেন। সারাদিনের জন্যও অনেকে চুক্তিভিত্তিক কাজ দেন। প্রতিদিন কাজের জন্য ৪০০-৫০০ টাকা পাওয়া যায়।

‘মনে করছিলাম কিছু টাকা রুজি করে বাড়ি যাবো। কিন্তু মতিঝিল এসে বসেছিলাম তিন ঘণ্টা। মালিবাগ দুই ঘণ্টা, গুলিস্তান দুই ঘণ্টা এবং কাকরাইল মোড়ে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। শেষমেশ কোনো কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।’ বলেন হাসেম।

এই শ্রম বিক্রেতার ভাষ্য, কী আর করবো! কাজ পেলাম না। স্ত্রী-সন্তানকে কী বলব বুঝতে পারছি না। এখন মহাখালী যাবো। সেখানে গিয়ে পরিচিত লোক পেয়ে গেলে কিছু টাকা নিয়ে বাড়ি যাবো। কারণ আমার এখন গাড়ি ভাড়াও নেই সঙ্গে।

হাসেম বলেন, ‘বাজারের সব কিছু অতিরিক্ত দাম বাড়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে সংসার চালাতে। সংসার আমার একাই চালাতে হয়। আমরা যারা দিনমজুররা আছি, একমুঠো ভাতের জন্য দিশেহারা হয়ে আমাদের প্রাণবাজী রেখে কাজ করতে হয়। কর্ম করলে খাই, না করলে উপোস থাকতে হয়।’

(ঢাকাটাইমস/৭ডিসেম্বর/পিআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :