বইমেলা শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই, থাকছে আঙ্গিকগত পরিবর্তন

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৭ | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫৭

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আগের দুবছর যথাসময়ে না হলেও এবার মহামারী পরিস্থিতি ভালো থাকায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল তৈরিতে চলছে ব্যস্ত সময়। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্ততির কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে বইমেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বইমেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরূল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের কমিটি হয়েছে। কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বইমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে ১৯ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।

জানা গেছে, বাংলাদেশ শিল্পীকল্যাণ ট্রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম কুমার দেকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালার প্রতিপালন পর্যবেক্ষণ এবং কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালা লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বইমেলার প্রথম দিন থেকেই টাস্কফোর্স যেন সঠিকভাবে বিষয়গুলো মনিটরিং করার বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী সোমবার বিকালে বইমেলার প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন দেখার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।

এবার বইমেলায় কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে অমর একুশে বইমেলার সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার মেলার পুরো বিন্যাসই পরিবর্তন করা হয়েছে। মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি অংশে। বেশি স্টল ও প্যাভেলিয়নসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে থাকছে আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ।’

‘বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা বইমেলায় আসছে। সবকিছু মনিটর করা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। সরকারি কোনো সেল থাকলে এবং সরকারিভাবে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাহলে ভাল হয়।’

আঙ্গিকগত যেসব পরিবর্তন:

মেট্রারেলের কারণে বিগত সময়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন যে ১৮২টি স্টল ও ১১ প্যাভেলিয়ন ছিল তা এবার সরিয়ে এনে সোহরাওয়ার্দীর মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। আর সেই স্থানে ফুডকোর্ট সহ নানা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আগে যেখানে মেলার প্রধান প্রবেশ পথ ছিল সেটি এবার প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে আগতরা মেলায় প্রবেশ করবে।

এবার মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ড এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ম্যাপ থাকবে এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।

যত স্টল আর প্যাভেলিয়ন:

এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্ত্বরে থাকছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন ৩৪টি।

অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪ টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে।

এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মূল গেট থেকে ঢুকেই শিশু চত্বর পাওয়া যাবে। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী বইমেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। ৯টায় আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে।

মেলায় বাংলা একাডেমির যেসব পুরস্কার:

এবারের বইমেলার শেষে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে দেয়া হবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।

প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে।

এর বাইরে ২০২৩ সালে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধের কারণে স্বাস্থ্য সচেতনতাকে গুরুত্ব দিয়ে গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়। ২০২১ সালে বইমেলা শুরু হয় মার্চে। ২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় সেবার একদিন পিছিয়ে মেলা শুরু হয়েছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :