ভোক্তা অধিকার: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমস্যা ও সম্ভাবনা

মো. রায়হান সরকার
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৯ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৫

পৃথিবীতে সব মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পরিবার, সমাজ, দেশ তথা রাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট কিছু সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক। একই ব্যক্তি পরিবারের সদস্য হিসেবে এক ধরনের অধিকার আবার রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রয়েছে আরেক ধরনের অধিকার।

অতএব, মানুষ হিসেবে আমাদের যেমন নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক অধিকার আছে তেমনি ভোক্তা বা ক্রেতা হিসেবেও স্বতন্ত্র কিছু অধিকার বিদ্যমান।

অর্থনীতির ভাষায়, একটি উৎপাদিত পণ্য বা সেবা চূড়ান্ত বা প্রান্তিক ভোগের উদ্দেশ্যে যিনি ক্রয় করে থাকেন তাকে ভোক্তা বা ক্রেতা বলা হয়। একজন ভোক্তা হিসেবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে অধিকার রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য; নিরাপত্তার অধিকার, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার ইত্যাদি। ভোক্তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট এ অধিকারসমূহ রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়।

বিশ্বের আরসব দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’ নামে একটি আধা-বিচারিক সরকারি সংস্থা আছে। যা পণ্য ও পরিষেবার ওপর ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তি এবং অধিকার সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে কাজ করে। এর সদর দপ্তর ঢাকায় এবং প্রতিটি বিভাগে স্থানীয় দপ্তর আছে।

ভোক্তাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ৬ এপ্রিল ২০০৯ সালে ‘ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার আইন’ প্রণয়ন করে। যার ফলে একজন বিক্রেতা তার পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল তথ্য ক্রেতা কে দিতে বাধ্য থাকবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ ব্যতীত বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই আইনটি সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। তাই কোনো ভোক্তা প্রতারণার শিকার হলে, তিনি সেটাকে ভাগ্যের ফের হিসেবে বিবেচনা করেন। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের তুলনায় অভিযোগের সংখ্যা খুবই কম। অপরদিকে সাম্প্রতিককালে অনলাইনে বেচাকেনার কারণে প্রতারণার ঘটনা বেড়েই চলেছে। অতএব বলা যায়, ভোক্তা অধিকার আইন সম্বন্ধে অজ্ঞতাই প্রতারণার মূল হাতিয়ার।

তবে বর্তমান দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির সুবাদে ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’ কর্তৃক গৃহীত ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর প্রচার ও প্রচারণা। যেমন: মোবাইল অ্যাপস (ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ), সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট (nccc-dncrp.gov.bd) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর দ্বারা ক্রমান্বয়ে জনগণ তথা ভোক্তা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে, ভোক্তার অধিকার আদায়ে অভিযোগের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ সফলভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু আইন যেমন; ফৌজদারি ব্যবস্থা (ধারা-৫৭): মামলা দায়েরের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২,০০,০০০ টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ড, অভিযোগকারীকে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ প্রদান করার বিধি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও দেওয়ানি প্রতিকার ইত্যাদি ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পরিশেষে বলা যায়, শুধু অধিদপ্তরের অপেক্ষায় না থেকে ভোক্তাদেরও নিজেদের জায়গায় সচেতন হওয়া এবং অধিদপ্তরের কাজে সহযোগিতা করলে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও এসডিজির লক্ষ্য মাত্রা পূরণের মাধ্যমে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে সমর্থ হবে।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

কিডনি রোগ বাড়ছে শিশুদেরও! যেসব লক্ষণ দেখলেই সতর্কতা জরুরি

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :