নানা অপরাধের পরও ‘তুলসী পাতা’ মাহির স্বামী রকিব! প্রকাশ্যে পিলে চমকানো তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:৩৯ | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৩, ২০:১৪

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে বিয়ে করে আলোচিত রকিব সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলাও। তবে অর্থ আর ক্ষমতার জোর খাটিয়ে তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজধানী লাগোয়া শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে রকিবের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আছে হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারসহ অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রকিব সরকারের পরিবার বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা। তবে তিনি টাকার জোরে বনে গেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। আর এই পরিচয়ে তিনি করছেন একের পর এক অপকর্ম। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, যার জমিতেই রকিবের নজর পড়ে সেটাই তিনি দখল করেন।

রকিবের বিরুদ্ধে থাকা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনসহ ডকেট আদালত থেকে উধাও হয়ে গেছে। আর এসবই তিনি করেছেন ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সম্প্রতি চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও স্বামী রকিব সরকার নতুন করে আলোচনায় আসেন। গত শুক্রবার ভোরে মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকারের গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে সনিরাজ কার প্যালেসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মোল্যা নজরুল ইসলামকে দায়ী করে ফেসবুকে লাইভ ও পোস্ট দেন মাহি। তবে এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশের কোনোই সম্পৃক্ততা ছিল না। বরং পুলিশ হামলার পর ঘটনাস্থলে যায়।

মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ এনে ওইদিন রাতেই পুলিশ বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। এছাড়া এই দম্পতির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী।

সৌদি আরবে ওমরা পালন শেষে শনিবার দেশে ফিরলে মাহিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আদালত দুটি মামলায় মাহিয়া মাহিকে জামিন দেন। তবে সেদিন মাহির সঙ্গে ফেরেননি স্বামী রকিব। তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন রবিবার, অর্থাৎ মাহির ফেরার পরদিন।

কে এই রকিব সরকার?

১৯৮২ সালে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ১৫নং ওয়ার্ডের ভোগড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন রকিব সরকার। তার বাবার নাম সামছুদ্দিন সরকার। রকিব সরকারের বড় ভাই সুলতান সরকার। তিনি গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবহন সেক্টরে বড় চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে তিনি পরিচিত।

রকিবের আরেক ভাই ফয়সাল আহমেদ সরকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক এবং গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আরেক ভাই কামরুল আহসান সরকার গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকার ও শওকত সরকারও তাদের নিকটাত্মীয়।

রকিবের বিরুদ্ধে যেসব মামলা:

রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ইনতুজা আক্তার রূপা নামে এক নারীকে গনধর্ষণের অভিযোগ আছে। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল রকির তার সহযোগি আরেফিন খান মৃদুলের বাড়ীতে ওই নারীকে ধর্ষন করে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-১৪৭, তাং-২৭/০৪/২০১৭। ধারা- ৯(৩)/৩০,২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন- ২০০৩)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলেও ক্ষমতার জোরে রকিব সরকার মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন বদলে দিয়েছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রনি সরকারের ‘সরকার ক্যাবল ভিশন’ নামে ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত আমির হামজা। রকিব সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ী রনির মধ্যে ডিস ও ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল। ডিস ও ঝুটের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রকিবের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আমির হামজা পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে রকিব রনি সকারকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় ম্যানেজার আমির হামজাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর রকিরের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন অজ্ঞাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমির হামজাকে টেনে হিছড়ে সরকার ক্যাবল ডিস অফিস থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে নলজানি টিএন্ডটি রোডের পাশে জাইকা ড্রেনের কাছে ভিকটিমের রক্তের তাজা দাগ দেখতে পাই পুলিশ। সন্ত্রাসীরা আমির হামজাকে মারপিট, জখম ও কুপিয়ে ওই জায়গায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগে রকিব সরকারকে এক নম্বর আসামি করে নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম জয়দেবপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। জয়দেবপুর থানার মামলা নম্বর ৭১; তারিখ ১২/১০/২০১৭। ধারা-১৪৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪। অভিযোগ আছে, রকিব সরকার ও তার ভাইদের চাপে এ মামলা তদন্তে গতি স্থিমিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হত্যা মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর রনি সরকারকে ফাঁসাতে নির্মানাধীন ভবনের একটি রুমে সহযোগীদের মাধ্যমে দুইটি অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা করে রকিব। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পিস্তল দুটি উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ভবনের মালিক রনি সরকারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে রনি ও রকিবের মধ্যে ডিস ও ঝুটের ব্যবসা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।