এবারের ঈদ উদযাপন ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৩৮ | প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ২১:৪৯

এবার রোজার শেষের দশকে বাংলাদেশে মরুভূমির আবহাওয়া তথা তাপমাত্রা বিরাজমান। প্রখর রৌদ্র ও প্রচন্ড তাপ। রোজাদারগণ তীব্র তাপদাহে সিয়াম পালন করছে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। এসময় মানুষ যে যেখানেই থাকুক না কেন নিজের বাড়িতে গিয়ে আপনজনের সাথে ঈদ পালন করে থাকে।পদ্মাসেতুতে মটর সাইকেল চলবে এম খবরে বাইকাররা আনন্দিত এবং মটরবাইকে কিছু শর্তপালন সাপেক্ষে বাইকে করে প্রিয়জনের সাথে ঈদ পালন করতে ইতোমধ্যে বাড়ির পানে ছুটে চলেছে লাখে লাখে। গরম তীব্র হওয়া স্বত্বেও বাঁধভাঙা জোয়ার আমরা দেখছি। তীব্রতাপদাহ উপেক্ষা করেও মানুষ যে যেভাবে পেরেছে নিজ বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে এভাবে অসচেতন হলে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। তাই ঈদুল ফিতর উদযাপনে মুসলিম বিশ্বসহ বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে আমাদেরও তীব্র গরমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উৎসব পালন করতে হচ্ছে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ স্মৃতিকাতর হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে স্মৃতির পাতাগুলো একটু ঝাপসা হয়ে এলেও মন থেকে একেবারে মুছে যায়না। টুকরো টুকরো হয়ে মনের কোনে জমে থাকে। সময়ে-অসময়ে নস্টালজিয়ায় ভোগায়! ঈদ নিয়ে আমার তেমনই কিছু স্মৃতি আছে যা কখনো ভুলতে পারবোনা। আমি মাঝে মাঝেই সেসব স্মৃতি রোমান্থন করে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠি। এখন বাচ্চা বা শিশু কিশোর মোবাইলে আসক্ত হয়েছে।অোমরা ছোটকালে যেসব আন্ন্দ উপভোগ করেছি এখন হয়তো আনন্দ উপভোগ করার ধরন পাল্টেছে। তবে এবারের ঈদ উদযাপন প্রচন্ড গরমে হবে তাই এখন যারা শৈশবকালে আছে তাদের জন্য অন্তত এবারের ঈদ স্মৃতি হয়ে থাকবে। যাইহোক সাম্প্রকিতকালে যেসব বিষয় ঈদ এলে সামনে আসে সে বিষয়গুলো আমি আবার মনে করিয়ে দিতে চাই।

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এক দিনেই ঢাকা ছেড়েছেন ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৭৮টি সিম ব্যবহারকারী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিম বাংলালিংকের। এরপর রয়েছে গ্রামীণ ফোনের।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার রবির মোট ৩ লাখ ২ হাজার ২৮৪ জন, গ্রামীণফোনের ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৯৫, বাংলালিংকের সাড়ে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৯ ও টেলিটকের ১৮ হাজার ১৯০ সিমের ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের আগে সরকারি দপ্তর ও অফিসগুলোতে শেষ কর্মদিবস ছিল মঙ্গলবার।

তবে মোবাইল ব্যবহারকারীর চেয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অধিকাংশই পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। একটি পরিবারের সবাই মোবাইল ব্যবহার করেন না। বিশেষ করে মোবাইল ফোনবিহীন শিশুরা এই হিসাবের বাইরেই থাকছে। আবার অনেকেই আছেন একাধিক সিম ব্যবহার করেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনি বা রবিবার (২২ বা ২৩ এপ্রিল) দেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদের ছুটির সময় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী ফাঁকা বাড়িতে না রেখে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে রেখে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

‘ঈদের সময় ফাঁকা ঢাকায় রাত কিংবা দিন সব সময় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা থাকবে। শুধু ঢাকাতেই নয় বড় বড় শহরগুলোসহ গ্রামেও ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় ঢাকার বাসায় স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা রেখে যান। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে একেবারে বাসা ফাঁকা রেখে যাওয়া উচিত না। যদি যেতে চান সেক্ষেত্রে টাকা-পয়সা ও গহনা নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যান অথবা সঙ্গে করে নিজে নিয়ে যান।’

এবছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া তৎপরতায় নিজ নিজ গন্তব্যে মানুষ পৌঁছাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন পুলিশ প্রধান। বলেন, ‘গত বছরগুলোতে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের সারাদিন রাত রাস্তায় যানজটে বসে থেকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের রাস্তার অনেক উন্নতি হয়েছে, চন্দ্রার আগের সেই ৮/১০ ঘণ্টার যানজট নেই, ছুটির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা সন্তোষজনক হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ‘পথে সহযাত্রী কিংবা কারো দেওয়া কোনোকিছু খাবেন না। এতে করে আপনি অজ্ঞান পার্টি কিংবা মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

‘বেপরোয়া গাড়িচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। ঈদযাত্রা যেন সবার জন্য নির্বিঘ্ন হয় সেজন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি আশা করি এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে। চালক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাবেন।’

ঈদে বাড়ি যাওয়া, ঈদের আনন্দ ভাগ করে আপনজনের সাথে নাড়ির টানে বাড়ি বা নিজ জন্মস্থানে যাওয়া বাঙালি জাতির চিরাচরিত অভ্যাস। কিন্তু তাতে এবার পুরোটাই বাঁধ সেধেছে অত্যাধিক গরম ও তীব্রতাপদাহ।

শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রমজান মাসের ৩০ দিনের রোযা সহিহভাবে ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে বন্ধ হয়। একমাস রমজান পালনের যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য সকল প্রকার অন্যায় ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকা তারই বাস্তবায়ন শুরু করা উচিত অন্যান্য মাসগুলোতে। রোযা রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো পানাহার বা খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাতে করে ধনী শ্রেণি বুঝতে পারে যে না খেয়ে থাকলে কি কষ্ট হয়। এরপর ঈদে সকল ভেদাভেদ ও ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে ঈদের জামায়াতে শরিক হয়ে এক অপরের খোঁজ খবর নেয়া হয়া কোলাকুলি করে। একে অপরকে দাওয়াত দিয়ে থাকি। এক আনন্দদায়ক পরিবেশ থাকে।

ঈদ পালন করতে যা যা করা যেতে পারে তা হল-

১. ঈদ উদযাপন যে যে অবস্থানে আছি সেখান থেকে পালন করি।

২. কোনো গরিব বা মিসকিনকে বাসায় নিয়ে খাওয়াতে পারব না সত্য কিন্তু কেউ যেন না খেয়ে থাকে সেজন্য সাধ্যমত প্রতিবেশিদের আর্থিক বা খাদ্য-দ্রব্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি।

৩. প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো আম্ফান ঝড় যেটি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগরেহাট, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ তাণ্ডব ঘটিয়ে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে গেছে তাদেরকে আমরা সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করি।

৪. প্রতিবেশি যারা না খেয়ে আছে তাদেরকে আগে কিছু দিয়ে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।

৫. মধ্যবিত্ত অনেকে আছে যারা কেউ কোন সাহায্য চাইতে লজ্জা পায় তাদেরকে হাদিয়া দিয়ে সহযোগিতার করতে পারি।

৬. সদকা-ফিতরা এবং যাকাত হিসেব মতে গরিবও বঞ্চিতদের মাঝে বিলিয়ে দেই।

৭. সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত এই করোনা মহামারিকালে। কেননা ধন-সম্পদ মারা গলে কেউ সঙ্গে নিতে পারবে না।

৮. নিজেরা সরকারি যে দিক নির্দেশনা আছে তা যথাযথভাবে পালন করি এবং মুখে মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতনা বাড়াতে একযোগে কাজ করি।

৯. ঈদ বেঁচে থাকলে আগামীতে আরও সুন্দর করে উদযাপন করা যাবে এমন উপলব্ধি মনের মধ্যে গেঁথে নেই এবং সেভাবে মেনে চলি।

১০. আপনি বা আমি যেভাবে ভালো আছি ঈদের শিক্ষা হিসেবে অন্যদেরকেও ভালো রাখার চেষ্টা করি।

লেখক: কলামিস্ট ও আইন গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :