মোহাম্মদপুর: বছর বছর ধরে টিকে আছে তিতাসের ‘১০ হাজার অবৈধ সংযোগ’
গত ২ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুর রহিম ব্যাপারী ঘাট এলাকায় গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিষ্ফোরণ ঘটে। আহত হন দুজন। ধসে পড়ে একটি দোকানের দেয়াল। এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত খুঁজতে গিয়ে অবৈধ সংযোগের অস্তিত্ব খুঁজে পায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। পরে বিচ্ছিন্ন করা হয় ওই সংযোগ।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, ‘মোহাম্মদপুর এলাকায় অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বর্তমানে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ। কিন্তু সদ্য নির্মিত ভবনগুলোতে গ্যাস আসছে কোথা থেকে?’
কিভাবে বছরের পর বছর অবৈধ গ্যাস সংযোগ টিকে থাকে- সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাসের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ঠিকাদার মিলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকেন আর্থিক চুক্তিতে। এসব সংযোগ অবৈধ হওয়ায় মাসিক বিল দিতে হয় না, তবে মাসোহারা দিতে হয় মাসে মাসে। এমনকি তিতাসের স্টিকার লাগানো গাড়িতে এসে এসব অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রায়ই টাকা নিতে দেখার কথা জানালেন স্থানীয়রা।
ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদপুর এলাকার শেখেরটেক ৭ নম্বর রোডের ৪২/১ নম্বর বাসায় ৬টি চুলার অনুমোদন আছে। তবে ব্যবহার করা হচ্ছে ১৫টি চুলা। ওই এলাকার আজিজ মহল্লার ৬সি/৭, ১২-সি/৬, ১২-সি/৯ ও ১২-সি/৫ নম্বর বাড়িতে ২-৪টি চুলা ব্যবহারের অনুমোদন নিয়ে ১৬-২০টি চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। তিতাসের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মীদের যোগসাজশেই এসব অনিয়ম করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি ও শেখেরটেক এলাকাজুড়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব টিনশেড বাড়ি বা প্লট কিনে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে, সেসব বাড়িতে বা প্লটে ২-৫টি চুলা ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। কোনোটাতে গ্যাস সংযোগই ছিল না। তবে নতুন সংযোগ বন্ধ থাকলেও হাউজিং কোম্পানির নবনির্মিত এসব বহুতল ভবনে গ্যাসের চুলা জ¦লছে ২০-৪০টি পর্যন্ত।
সরেজমিনে মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর বসিলায় ওয়েষ্ট ধানমন্ডি হাউজিং এলাকার এ ব্লকের ৫ নম্বর রোডে কয়েকটি নতুন বহুতল ভবনের সব কয়টি ফ্ল্যাটেই গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এই এলাকার পাশাপাশি নবোদয় হাউজিংয়ের ১,২,৩ নম্বর রোড এলাকা জুড়ে কয়েকটি নতুন বহুতল বাড়ির চিত্র একই। এছাড়া বসিলা গার্ডেন সিটি, শাহজালাল হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং, রায়ের বাজার, ঢাকা উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, সাত মসজিদ হাউজিং, বাঁশবাড়ি, চাঁদ উদ্যান ও সোনা মিয়ার টেক এলাকা জুড়ে নতুন পুরাতন ভবনগুলোতে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ অহরহ।
মোহাম্মদপুর ছাড়াও, আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং ২য় প্রকল্প, আদাবর বাজার, আদাবর-১৬, ১৭ এবং মনসুরাবাদ এলাকা জুড়ে রিক্সার গ্যারেজ থেকে শুরু করে টিনশেড বাড়ী এবং নতুন ভবনগুলোতে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
এদিকে মোহাম্মদপুরে কতটি অবৈধ সংযোগ রয়েছে সেই হিসাব নেই তিতাসের কাছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ এলাকায় দশ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, যে বাসা বাড়িতেগুলোতে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। সেই বাড়িগুলোতে তিতাসের ঠিকাদারদের লোক এসে দুই থেকে ছয় মাস পর পর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যায়। এর সঙ্গে তিতাস গ্যাসের বিপনন শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত।
এ বিষয়ে তিতাসের ধানমন্ডি জোন-১১ এর বিপনন শাখার ডেপুটি জেনালের ম্যানেজার (ডিজিএম) রবিউল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, মোহাম্মদপুরে একটা বাসায় আমরা অবৈধ গ্যাসের সংযোগ পেয়েছি। তিনটা বৈধ চুলার আড়ালে তারা ৪২টি চুলা ব্যবহার করছিলেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিতাসের স্টিকার লাগনো গাড়ি ব্যবহার করে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়ের বিষয়ে ডিজিএম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। তবে গ্রাহক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
(ঢাকাটাইমস/২০মে/আরআর/আরকেএইচ)