ডিআরইউতে সংবাদ সম্মেলন

জোসেফ-হারিস-আনিসের বিচার চাইলেন সাবেক দুই কাউন্সিলর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৪:৫৩ | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২৩, ১৪:০৬

২০১৯ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জোসেফ-হারিস-আনিসের নৃসংশতার শিকার হওয়ার দাবি করেছেন সাবেক দুই কাউন্সিলর। ওই সময়ে তাদের ইন্ধনে ও প্রভাবে এই দুই কাউন্সিলর গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছেন বলেও অভিযোগ তাদের। এসব বিষয়ে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তারা।

রবিবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান এ বিচার দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারেকুজ্জামান রাজীব দাবি করেন, খুব অল্প বয়সেই তিনি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে ঈর্ষান্বিত হয় তোফায়েল আহমেদ জোসেফ-হারিস আহমেদ-আনিস আহমেদ গং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করান।

এই সবকিছু একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার ‘সন্ত্রাসী’ ভাইদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, ‘আমাকে আটকের পর রাতভর আমার বাসা ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চলেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে সন্ধান করেছে। তবে অভিযান শেষে অভিযান পরিচালনাকারী দল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, আমার কোনো ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ সেই অভিযান ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি বিদেশে আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য-প্রমাণও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের তদন্তে পায়নি।’

আরও পড়ুন>>চাঁদা না পেয়ে অপহরণ, ঢাকা কলেজের দুই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার​

‘নব্বই দশক থেকে জোসেফ-হারিস পরিবার ঢাকা শহরে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত’ উল্লেখ করে সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘তারা রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মোহাম্মদপুর তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পুরোনো অভয়ারণ্য। সেই এলাকার একজন কাউন্সিলর ছিলাম আমি। আমার জায়গায় আসিফ আহমেদকে কাউন্সিলর বানাতে পরিকল্পিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৯ সালে আমাকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা কিংবা জিডি পর্যন্ত ছিল না।

কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয়েও শুধুমাত্র ওই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিনা অপরাধে তিন বছরের বেশি সময় জেলে থাকতে হয়েছে। আমার জীবন থেকে তিনটি বছর কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

বর্তমানে তিনি এবং তার পরিবার হুমকির মুখে আছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার প্রাণনাশের শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ‘অমানবিক’ ঘটনায় জড়িত বিশেষ মহলকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের অভিযোগ করেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান।

লিখিত বক্তব্যে মিজান দাবি করেন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অনুগত কর্মী। তিনি ফ্রিডম মিজান নন। ফ্রিডম মিজান সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

হাবিবুর রহমান মিজান বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলায় তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার জজ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই মামলায় আসামি ছিলেন জোসেফের ভাই হারিস আহমদ ও আনিস আহমদ, যারা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। হারিস ও আনিস রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এমনকি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের কারাগারে যেতে হয়নি।’

তাদের বিরুদ্ধে এখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে দাবি করে মিজান

আরও বলেন, ‘আমার ভাইয়ের খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তোফায়েল আহমেদ জোসেফও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান ২০১৮ সালের মে মাসে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে আসেন জোসেফ। এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন হারিস। নব্বই দশকে হারিস দলবদল করেন। বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন জোসেফ। ওই সময় মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে।’

জোসেফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো চলছে বলে দাবি হাবিবুর রহমান মিজানের।

সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘২০১৯ সালে পরিবর্তিত এক পরিস্থিতিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আমাকে আটক করা হয়। যদিও এর আগে আমার নামে কোনো থানায় কোনো মামলা ছিল না।’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘ওই সময় আমার বিরুদ্ধে সাজানো সব অভিযোগ আনা হয়। এমনকি আমার নামও বদলে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান দেওয়া হয়। অথচ আমার নাম হাবিবুর রহমান মিজান।’

মিজান আরও বলেন, ‘ওই অভিযান ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত না থাকলেও আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

বাসায় থাকা দলিলপত্র, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি, যা মামলার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি।

সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ-হারিস-আনিসের মদতে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তার নামে আমার পরিচয় দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের মূল কারণ ছিল জোসেফ গংয়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় আবারও পুরোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করা। অথচ আমার ভাই হত্যায় তার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় জোসেফ অঙ্গীকার করেছিল, সে ভালো হয়ে গেছে, আর কোনোদিন কোনো খারাপ কাজ করবে না। বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা তার এক আপনজনের সরাসরি সহযোগিতায় আমার ওপর নৃসংশতা চালায় তারা।

আমাকে গ্রেপ্তারের পর সাজানো ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।’

হাবিবুর রহমান মিজান অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে তার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তিনি স্ত্রীর ‘মৃত মুখটাও’ দেখতে পাননি। তার মা, ভগ্নিপতিসহ অনেক আপনজন মারা গেলেও তাদের ধর্মীয় বিদায়ে তিনি অংশ নিতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মাথার ওপর এখনো ঝুলছে কথিত অর্থপাচার এবং অবৈধ অস্ত্র মামলা, যার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাভোগের পর অবশেষে আমি মুক্তি পাই গত বছরের ৮ নভেম্বর।

‘অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির’ প্রতিকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছি। এটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ ও তার প্রভাবশালী শক্তি আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর রাজীবকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এর আগে ১০ অক্টোবর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাব বলেছিল, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৮

সনদ জালিয়াতি: কারিগরি বোর্ডের ওএসডি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি

বুথ ভেঙে নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা, বেরিয়ে এল রহস্য

জাল সার্টিফিকেট: প্রয়োজনে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি

সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

প্রবাসীদের ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম হ্যাক করে ব্লাকমেইলিংয়ে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ, দুজন গ্রেপ্তার

পল্লবীতে পাভেল হত্যা: নেপথ্যে মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার ৮

মাদক-ইয়াবা কারবারে বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সিআইডি

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হটলাইন থেকে গ্রাহককে ফোন, অ্যাকাউন্টের টাকা হাওয়া

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :