এক মাসেও জানা গেলো না লাশটি কার

আশিক আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৮:২৭ | প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৩, ১৭:৫৮

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গত ১৭ এপ্রিল এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন ইসমাইল নামে আরেক ব্যক্তি। তখনই তার দুই পায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো ছিল। পরনে ছিল একটি ময়লা লুঙ্গি। পুরো শরীর ছিল ধুলোমাখা। হাসপাতালের খাতায় তার নাম লেখা হয় মো. মাসুদ, বয়স ৪০। বাবার নাম আজগর এবং বাসা কামরাঙ্গীরচর। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর এক মাস পার হয়ে গেলেও জানা গেলো না লাশটি কার।

কে তার স্বজন, তিনি কীভাবে মারা গেলেন তাও জানা যায়নি। আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করা হলেও তাতে বাধে বড় বিপত্তি। অবশেষে শাহবাগ থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে লাশটি আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে দেয় বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।

শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম আসলাম, বাবার নাম কালাম। বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার জাদ্দুর গ্রামে। এই ঠিকানা নিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি।

পুলিশ বলছে, সদরপুরে জাদ্দুর গ্রাম নামে কোনো গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাাচ্ছে না। এজন্য ওই ব্যক্তির স্বজনদেরও তথ্য মিলছে না।

যেভাবে ব্যান্ডেজে মোড়ানো লাশ এলো ঢামেক মর্গে

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৭ এপ্রিল সকালে ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে নিয়ে আসা ইসমাইল পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মাসুদ। তাকে গাবতলী এলাকা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ওই ব্যক্তিকে ১৭ এপ্রিল সকালে হাসপাতালের আনার পর দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর পরপরই কৌশলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ইসমাইল নামের ব্যক্তি। হাসপাতালে কাগজপত্রে থাকা তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। ১৮ এপ্রিল থেকে লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া বলেন, ভর্তি কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তি গাবতলী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। এরপর দারুস সালাম থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, ওইদিন ওই এলাকায় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি। পরে বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানানো হয়।

দারুস সালাম থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একটা সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ দেওয়া হয়। তারা যাচাই করে দেখেছেন, ওই দিন তার থানা এলাকায় কোনো সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। ঈদের আগে হওয়ায় সে সময় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি ছিল। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই পুলিশ জানত।

শাহবাগ থানা পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিনেও ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় শাহবাগ থানায় একটি জিডি করে পুলিশ। এরপর সিআইডির ক্রাইমসিন ওই ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে। তবে তাতেও ঠিকানায় উল্টাপাল্টা তথ্য পাওয়া যায়।

শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওই লাশটির ফিঙ্গার প্রিন্টে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আসলাম নাম শনাক্ত করা হয়। বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার জাদ্দুর গ্রাম উল্লেখ রয়েছে। পরে আমরা ফরিদপুরের সদরপুর থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই থানা থেকে আমাদের জানানো হয়, সদরপুরে ওই নামে কোনো গ্রাম নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পুরো ঘটনাটি নিয়েই রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া গেলে তিনি কি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যেত। পুলিশ প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে।

তাহলে লাশটি কী করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কবরস্থানে দাফন করে দিয়েছে। এ ঘটনায় একটি জিডি করা হয়েছে। তবে লাশটির কোনো স্বজন না থাকায় কোনো মামলা করা হয়নি। যেহেতু মামলা হয়নি তাই এই ঘটনার কোনো তদন্তও করা হয়নি। ইসমাঈল নামে যে ব্যক্তি আহত অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে এনেছিলেন তার পরিচয়ও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :