বাড়িতে হাঁটুপানি, হাত-পায়ে ঘা, মাচায় উঠে রক্ষার চেষ্টা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২৩

বাড়ির চারপাশে পানি, ঘরে-বাইরে কাদা। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি মানুষের হাত-পায়ে ঘা হয়ে গেছে অনেকের। তাদেরই একজন ভুক্তভোগী ফজিলা বেগম। তিনি মাচায় উঠে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। এভাবে হাজারো কষ্ট নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। আরেক জন রেনু বেগম। তিনি পানি কমলেও দুর্ভোগ না কমায় কোনো রকমে ঘরের দরজায় আধা শুকনা লাকড়ি দিয়ে চুলায় রান্না করছেন। এমন হাজারো কষ্টে পানিবন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের ৩০টি পরিবার।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায় হাঁস-মুরগি গরু ছাগল নিয়ে সবাই খুব কষ্টে আছেন। অন্যের বাড়ি থেকে একবেলা রান্না করে ক্ষুধা মেটানোর চেষ্টা করছেন। একজন বলছেন ‘কাজ নাই-কাম নাই। খুব কষ্টে দিন কাটছে। মেম্বার-চেয়ারম্যান তো খোঁজে নেয় না। পানিতে সংসারের কাজ করতে গিয়ে হাতে পায়ে ঘা ধরেছে পানিবন্দি মানুষের। জায়গায় বাড়ি করে খুব কষ্ট করে থাকি। টাকা পয়সাও নাই উঁচু জায়গা জমি কিনে বাড়ি করবো। এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের রেপুনা বেগম।শুধু রেপুনা বেগমই নয় ওই এলাকার একাধিক পরিবারের দুর্ভোগের চিত্র একই।

রেপুনা বেগম স্বামী এরশাদ আলী। স্বামী সন্তানসহ এক ঘরে বসবাস। পাশে হাঁসমুরগির খোয়ার। ঘরে কাদা, আঙিনায় পানি। দুদিন আগে ওই বাড়িতে ছিল কোমর পানি। পুরুষ মানুষ নৌকা, সাঁতরিয়ে উঁচু স্থান সড়কে সময় কাটাতে পারলেও বাড়ির শিশু বৃদ্ধ ও নারীরা পড়েছেন বিপদে। ভোগান্তি দুর্ভোগ কাটতে দিনের বেলা বসে আছেন হাঁস-মুরগি থাকা ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহযোগিতা নয় সরকারি বা কোনো এনজিও যদি ভিটেমাটি উঁচু করে দেয় খুবই খুশি হতেন বলে জানান তিনি।

হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা আকিলা বেগম বলেন, বর্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নাই। এ সময় বাড়ির কর্তাদের কাজ কাম না থাকায় আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করি। মাঝে মধ্যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাই। সেটা দিয়ে কি আর চলে। গরিব মানুষের দুঃখ বারোমাস।

উপজেলার মাঝের আলগার চরের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, এক সপ্তাহ থেকে বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে আছে। কাঠখড়ি-জ্বালানি যা ছিল সব শেষ, শান্তিমতো রান্না করে দুই বেলা খাবো তার উপায় নাই। খড়ির মঙ্গা দেখা দিছে। ঘরে চাল থাকলেও রান্না করি খাওয়ার উপায় নাই।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলায় তিস্তা নদীর পানি ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৫ ও ৩৮ সে.মি নিচে রয়েছে। অনান্য নদ-নদ নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাসের তথ্যানুয়ায়ী সপ্তাহে বড় ধরনের কোনো বন্যার শঙ্কা নেই।

হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া বলেন, বন্যায় পানিবন্দি কিছু গ্রাম রয়েছে তারা কিছু দুভোগে ও পরেছে। তাদের সহয়তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলায় ৫টি স্থানে ৭৮০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮. ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫ হাজার ২৮০টি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে। জেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ আছে। গো- খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ মজুদ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :