হঠাৎ মাঠে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর, সেঁটেছে পোস্টার বিলাচ্ছে লিফলেট, উদ্দেশ্য কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫২ | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতার মধ্যেই সংগঠনটি রাজধানীতে লিফলেট বিলি ও বিভিন্ন দেয়ালে রঙিন পোস্টার সেঁটেছে। যাতে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, মার্কিন উপনিবেশ থেকে মুক্তির উপায়সহ নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় অনলাইনে তাদের মিটিং হবে সেটাও পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় হিযবুত তাহরীরের পোস্টার দেখা গেছে। তবে এসব কাজ তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অগোচরে করছে বলে দাবি পুলিশের।

আর র‌্যাব-সিটিটিসি বলছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হিযবুত তাহরীরের বেশ ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সরাসরি এবং অনলাইনে মনিটরিং করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের কোণঠাসা করে ফেলা হবে।

জানা গেছে, ২০০১ সালে দেশে প্রথম সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে হিযবুত তাহরীর। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তারা প্রকাশ্যেই সভা-সমাবেশ ও মিছিল করেছিল। ২০০৯ সালে দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার।

এদিকে বুধবার সকাল ১০টার দিকে হিযবুত তাহরীর রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সংগঠনের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে। সেখানে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য ছিলেন, যারা বয়সে তরুণ। সবাই প্যান্ট-শার্ট পরা ছিলেন। ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজারমুখী সড়কের বাস, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও রিকশায় থাকা যাত্রীদের লিফলেট দেন তারা। লিফলেট বিতরণের সময় এসব তরুণ ‘জালিম সরকার থেকে মুক্তির উপায়’, অনলাইনে যোগ দেয়ার কথা বলছিলেন।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির দেয়ালে তাদের বড়বড় রঙিন পোস্টার দেখা গেছে। কবে, কখন তারা এসব পোস্টার লাগিয়েছে কেউ বলতে পারছেন না। গ্রেপ্তার বা নজরদারি এড়াতে সিসিটিভি কাভার করে এমন জায়গায় তারা পোস্টার লাগায়নি।

তাদের লিফলেট ও পোস্টারে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, সরকার প্রধানের নামে বিষোদগারসহ নানান ধরনের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র বলছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় তাদের প্রচার করছে। মূলত তারা শিক্ষার্থীদের দলে ভিড়াতে চায়। এ জন্যই তাদের কার্যক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর আশপাশ এলাকায় দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে তাদের। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কারওয়ান বাজার এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে হিযবুত তাহরীর। মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন দেয়ালেও দেখা গেছে হিযবুত তাহরীরের অসংখ্য পোস্টার সাঁটা। এসব পোস্টার-লিফলেট সরকার হটানোর ডাক দেওয়া উসকানিমূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী নানা স্লোগানযুক্ত।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষিদ্ধের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও হিযবুত তাহরীরের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

তবে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মনে করেন, ‘প্রচারণা থাকলেও বড় নাশকতার সক্ষমতা নেই জঙ্গি সংগঠনটির।’

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘তারা যেসব পোস্টার সাঁটিয়েছে তা রাতের আঁধারে চোরাপথে করেছে। এটা নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে।’

অনলাইন সম্মেলনকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এগুলো বিদেশে বসে হচ্ছে। দেশে তো তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আমরা তাদের অনলাইন কার্যক্রম মনিটরিং করব।’

সম্প্রতি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান। তিনি বলেন, ‘যারা লিফলেট বিলিয়েছে এবং পোস্টার সেঁটেছে আমরা দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারব। রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যারাই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না এবং তাদের উদ্দেশ্যও সফল হবে না।’

কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলে আমরা আদাবর থেকে হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা মো. তমাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছি। তার বিরুদ্ধে তিনটি জঙ্গি মামলা ও একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি তাদের পোস্টার সাঁটানোর বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের গোয়েন্দারা তাদেরকে শনাক্তে কাজ করছেন। দ্রুতই সবাই আইনের আওতায় আসবে।’

হিযবুত তাহরীরের লিফলেট-পোস্টারে কি আছে?

হিযবুত তাহরীর তাদের ব্যানারের শুরুতে লিখেছে ‘অনলাইন সম্মেলন’। পরের লাইনে লিখেছে- যালিম হাসিনা এবং উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের কবল থেকে মুক্তির উপায়। এর নিচে লিখেছে- বক্তব্য ১: হাসিনা কর্তৃক মার্কিনীদের কাছে দেশের স্বার্থ বিক্রি এবং জনগণের সাথে বিএনপিগোষ্ঠীর প্রতারণা। বক্তব্য ২: হাসিনার পতন এবং উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের কবল থেকে মুক্তির রূপরেখা।

তার নিচে লেখা ‘শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ’। পাশে একটা কিউআর কোড (কুইক রেসপন্স কোড থেকে সংক্ষিপ্ত) এবং তার পাশে লেখা সন্ধ্যা সাতটা। সবশেষে নিচে লেখা হয়েছে হিযবুত তাহরীর/উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ।

গত বছরের মার্চে অনলাইন সম্মেলন ডেকেছিল নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি। মূলত তারা নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই এধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বারবার লাইভ সম্প্রচারের প্ল্যাটফর্ম ও ইউআরএল পরিবর্তনের কারণে অনলাইনে তাদের জঙ্গিবাদী তৎপরতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে পারছে না। তাই বন্ধ হচ্ছে না তাদের এই কার্যক্রম।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

বেড়ার মেয়র আসিফ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, দেশ ছাড়লেন কীভাবে? কৌতূহল সর্বত্র

শিক্ষকদের পেনশনের টেনসনে স্থবির উচ্চশিক্ষা

কেরাণীগঞ্জে দেড় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরুর সন্ধান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালুর উদ্যোগ কতটা গ্রহণযোগ্য? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সর্বজনীন পেনশনে অনীহা কেন, যা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকনেতারা

সাদিক অ্যাগ্রোর সবই ছিল চটক

ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি দিতে ধীরগতি যে কারণে

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক: উপজেলা হাসপাতালগুলোতে নেই চিকিৎসা সক্ষমতা

মাগুরায় বাড়ি-জমি উত্তম কুমারের: কোথাও খোঁজ নেই তার, দুদকের অনুসন্ধান সম্পন্ন

কোথায় পালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার, জানে না পুলিশ, স্থায়ী বরখাস্ত হলেই ডুমাইনে ভোট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :