নির্বাচন উৎসবমুখর করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্রী প্রার্থী ও দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন আলোচনা এখন সর্বত্র। গ্রাম থেকে শহর সবখানে নির্বাচনি আমেজ। এর ফলে নির্বাচন এখন প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে যা করার দরকার তাই করা হবে। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী দেওয়ার পরেও যদি দলের কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রাথী হন এবং তার জনপ্রিয়তা থাকলে পাস করে আসবেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী যেই বিজয়ী হবেন, তিনি তো আওয়ামী লীগেরই।
নির্বাচন প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ করতে ভোটের মাঠে ডামি প্রার্থী রাখার কথা আগেই বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় কেউ যাতে নির্বাচিত হতে না পারে, সেজন্য দলের বিদ্রোহীদের প্রতি নমনীয়তা দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে অতীতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোরতা দেখিয়েছিল দলটি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গেলেই নেওয়া হত সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এবার সেই নিয়মের বাইরে আওয়ামী লীগ।
উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো বারবারই বলে আসছে, অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা। বাস্তবতার নিরিখে নতুন কৌশলে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জনগণকে ভোটমুখী করতে স্বতন্ত্র কৌশল নিয়েছে দলটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত অবস্থান বলেও গত সোমবার জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেই বিষয়টি এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগে মনোনয়নপ্রাপ্তদের। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও ভরাডুবির আশঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা এরইমধ্যে ভোটে লড়াইয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। কোথাও কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের সঙ্গে অনেক নৌকার সমর্থকদের সংঘাতও বাধছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা। গত মঙ্গলবার একদিনেই ৩৩টি আসনে আওয়ামী লীগের ৫২ জন নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের হয়ে যারা এমপি,মন্ত্রী হয়েছেন বা ৭১ জন সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন, তারা যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট না করেন, সে ব্যাপারেও দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে পারবেন, সেটি নিয়ে ভাবছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী হলে দলীয় বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে দলের ভেতরে ভেতরে। এই নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলে আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপ অনুভব করছে।
খোজঁখবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন আসনে দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। ২৬ নভেম্বর দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র (ডামি) প্রার্থী হওয়ার পরামর্শ দেন। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার আনার বিষয়টি অন্যতম লক্ষ্য। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যাতে বিজয়ী হতে না পারেন, এবার সে বিষয়ও চিন্তায় রেখেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বর্তমান এমপিদের মথ্যে যারা মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে হাবিবে মিল্লাত, রাজশাহী-৪ আসনে এনামুল হক, কুমিল্লা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্তা। এছাড়া আরও প্রায় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের নেতা বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিএনপি ও তার জোট শরিকরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনে ১৫১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা। ওই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। ফলে এবার আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপি না এলেও ভোটের মাঠে যত বেশি সম্ভব দল ও প্রার্থীদের আনার চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও কৌশল হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইছে দলটি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশের মানুষ নির্বাচন চায় বলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী। নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে কেউ যদি বাধাগ্রস্ত করতে আসে দেশের মানুষই তাদেরকে প্রতিহত করবে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।’
(ঢাকাটাইমস/৩০নভেম্বর/কেএ/এজে)

মন্তব্য করুন