রুনার যতো কথা 

রুমান হাফিজ
 | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২০

ছোট্টবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস। ক্লাসের বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়তে গিয়ে কতবার যে বকাঝকা খেতে হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু বই পোকা মেয়েকে দমিয়ে রাখা যায়নি। সহপাঠী, আত্মীয় যেখানে যার থেকে পেরেছেন বই সংগ্রহ করে পড়েছেন। তারপরও একাডেমিক ফলাফল অন্য সবার থেকে ভালোই হয়েছে তার।

সেই মেয়ের পুরো নাম রুনা তাসমিনা। জন্ম এবং শৈশবের বেশি অংশ কেটেছে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। মাধ্যমিক পাস করার পরপরই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের সহজ পরিবেশে বড় হওয়া তাসমিনাকে সাংসারিক জীবন তাকে ব্যস্ত করে রাখলেও মনের ভেতরে একটা চাপা ক্ষোভ সব সময় তাকে তাড়িত করত। চুপিসারে উচ্চমাধ্যমিক এ ভর্তি হয়েছিলেন। শুধু পরীক্ষা এলে পরে নানা বাহানা দেখিয়ে ছুটি নিতে হয়েছে। এভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। স্বামীর প্রবাস জীবনে তাকেও সাথী হতে হয়। চলে যান দুবাইতে। ইচ্ছে ছিল যেভাবেই হোক অনার্স এ ভর্তি হবেন। সুযোগটা আর হলো কই! তবে প্রবাস জীবনে সাংসারিক ঝামেলা কিছুটা কম থাকায় আবারও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়। তখন দেশের বইগুলো সহজলভ্য ছিল না ওখানে। যেটুকু পারা যায় সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি নিজেও টুকটাক লিখতে শুরু করেন।

প্রায় একযুগ প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফিরেন। এসে মেয়েদের (তাসরিন আর নূরিহান) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিদিন তাদের স্কুল, বাসায় পড়ানো সব মিলিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই। পরিবারটা নিজের মতো করে গোছানোর মধ্যখানে নিজের ইচ্ছাটা আবার নাড়া দেয়। দেরি না করে অনার্স এ ভর্তি হন।

পরবর্তীতে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করেন। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম শহরের ইংরেজি মাধ্যমের একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বাসায় প্রতিদিন পত্রিকা রাখার সুবাধে গল্প, কবিতা, কলাম, ফিচার এসব পড়ার সুযোগ হয়। মনে মনে ইচ্ছা জাগে নিজের লেখাগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করার। কিছু শুভাকাঙ্খীর মাধ্যমে সেই ইচ্ছাটা পূরণ হতে খুব একটা সময় লাগেনি। আস্তে আস্তে দেশের অনেক পত্রিকার তার লেখা প্রকাশ হতে থাকে। সেই ছোট্ট বেলার বই পোকা স্বভাবটা তাকে এতটাই সাহায্য করছে যা অকল্পনীয়।

ছোটদের বড়দের গল্পে সমান দক্ষতা তাসমিনার। বিশেষ করে ছোটদের গল্প রচনায় তিনি বারবার চমকে দিয়েছেন। লেখাতেও তার সেই সৃজনশীলতার নতুনত্ব উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। গল্প বলায় একান্ত তার নিজস্ব। ছোট ছোট বাক্য। সংক্ষিপ্ত ডায়ালগ তার লেখনীকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। ছোটদের উপযোগী বেশি লিখলেও বড়দের গল্পতেও তিনি কম যান না। ২০১৮ সালের বইমেলায় রুনা তাসমিনার একসঙ্গে দুটো বই প্রকাশনীর খরচেই বের হয়!

‘মেঘে ঢাকা চাঁদ’ নামে বড়দের উপযোগী আর ‘টিয়া হাসে নীল আকাশে’ নামের ছোটদের উপযোগী গল্পের বই। ‘সুবাসিত নক্ষত্ররাত’ নামে রয়েছে বড়দের উপযোগী আরেকটি বই।

শিশুতোষ গল্পের বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘টিয়া হাসে নীল আকাশে’, ‘সূর্য নাচে রং তুলিতে’, ‘দিপুর লাল ঘুড়ি’, ‘নাম ছিল তার রাসেল’, ‘গাছ পাখি রোদের হাসি’, ‘প্রজাপতির টিয়ে বন্ধু’। এছাড়া আছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পের বই ‘প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু’।

শুধু বড়দের কিংবা ছোটদের গল্প লেখায় সীমাবদ্ধ নয় তাসমিনার পথচলা। তিনি দ্বিমাসিক ‘অনন্য ধারা’ নামক ম্যাগাজিনের সম্পাদনাও করছেন। যেখানে তিনি তুলে আনছেন সমাজের নানা জায়গায় অবদান রাখা মানুষের গল্পগুলো। আছে সাহিত্য সংস্কৃতির লেখাও। খুব সময়ে যার পরিচয় ছড়িয়ে গেছে অনেক বেশি।

জীবনের এতসব বৈচিত্র্য নিয়ে যেমনটা বলছিলেন তিনি, ‘একদম ছোট বেলায় আমার বিয়ে হওয়াটা নিয়ে এখনও কষ্ট পাই। পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। পেরেছি আবার কখনও পারিনি। নিজের স্বপ্নের জায়গা থেকে কখনও সরে আসিনি। বিশ্বাস ছিল আমি পড়ালেখা কমপ্লিট করবই। করেছিও। এর জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। তাতেও আমি খুশি। সবচেয়ে বড় কথা আমি লিখতে পারছি প্রাণ খুলে। আমার কথা, ত্রুটিপূর্ণ জিনিসের কথা, কারও কষ্টের কথা, সুখের কথা,সাফল্যের কথা, সব, সব কিছুই ভালো লাগছে। মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। যা বলে শেষ করা যাবে না। আমি লিখতে চাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।’

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :