কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ চরাঞ্চলে ভোটারদের ভোট প্রদানে আগ্রহ কম

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৭

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের বৃহৎ সীমান্তবর্তী এবং নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ চরাঞ্চলে সাধারণ ভোটারের ভোট প্রদানে আগ্রহ কম। জেলা শহর ও উপজেলা শহরে বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণায় সরব থাকলেও এর উল্টোচিত্র এ চরাঞ্চলে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চরবাসীদের কাছে এখনও চোখে পড়েনি পোস্টারিং, প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচার ও প্রচারণা।

জেলার ৯টি উপজেলায় দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদনদীতে চরাঞ্চল রয়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক। এরমধ্যে প্রায় ৭/৮লাখ মানুষের বসবাস। জেলার মূল ভূখন্ডের সঙ্গে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন রয়েছে অস্টমিরচর, নারায়ণপুর, সাহেবের আলগাসহ বেশ কিছু ইউনিয়ন।

চর যাত্রাপুরের ভোটার শাহ আলম বলেন, শহরের মানুষের যেমন ভোটার হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় সেভাবে আমাদের চরের ভোটারকে মূল্যায়ন করা হয় না। এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী আসেনি আমাদের নিকট ভোট চাইতে। তাই আমাদেরও ভোট প্রদানে আগ্রহ কম। কোনো প্রার্থী বাছাই করতে পারিনি আমরা ভোটাররা।

একই এলাকার ভোটার শাহের আলী বলেন, গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে একজন ভোটার কক্ষে ঢুকছে আর একজন লোক এসে আমাকে বললো আপনার ভোট হয়ে গেছে। আপনি চলে যান। মন খারাপ করে চলে আসছি। চরাঞ্চলে আমরা নিরাপত্তা বেশি চাই এবং নিজের ভোট যেন নিজেই দিতে পাই।

চিড়া খাওয়া মাঝের চর গ্রামের ভোটার খলিলুর রহমান বলেন, সরকার যদি সুষ্ঠু ভোট আর নিরাপত্তা দেয় চরের মানুষকে তাহলে ভোট দিতে যাবো। না হলে যাবো না।

রলাকাটা চরের ভোটার পরশ উদ্দিন বলেন, আমার ৬৭ বছর হলো আমি মেম্বার, চেয়ারম্যানি ভোট ছাড়া সরকারি ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট হয়ে যায়। এবার যেন আমি সরকারি ভোট দিতে পারি এমন নিরাপত্তা চাই ভোটে।

পোড়ার চরের নারী ভোটার মর্জিনা বেগম বলেন, হামরা সরকারি ভোট দিমো। প্রার্থীতো অনেক দ্বাড়াইছে। এরমধ্যে যারা চরের রাস্তাঘাট, নদী ভাঙনরোধ এবং চরের মানুষের উন্নয়ন করবে সেমন প্রার্থীকে ভোট দিবো।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ভোটার সহিদুর রহমান বলেন, আমাদের ইউনিয়ন নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। নৌকা ছাড়া কোন যোগাযোগ করার ব্যবস্থা নেই। তবে যেকোনো ভোট অনুষ্ঠিত হলেও এই এলাকায় আমরা মিলেমিশে ভোট দেই। আমাদের মধ্যে কোনো মারামারি বা ঝগড়া-বিবাদ হয় না।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলায় ৯টি উপজেলায় ১১টি থানা নিয়ে ৪টি আসন গঠিত। এরমধ্যে মোট ভোটার-১৭লাখ ৮২হাজার ৩২জন। পুরুষ-৮লাখ ৮৪হাজার ২৬৭জন, নারী-৮লাখ ৯৭হাজার ৭৫০জন এবং হিজড়া-১৫জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৭০২টিতে ভোট কক্ষ রয়েছ ৪ হাজার ৪৩টি।

এরমধ্যে কুড়িগ্রাম-১ আসন নাগেশ্বরী-১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ, ভূরুঙ্গামারী-৮৩টিতে ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কচাকাটা থানায় ৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সব গুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র ২২০টিতে ভোট কক্ষ রয়েছে ১১৯২টি। এই আসনে ভোটার রয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ১৬৩ জন। পুরুষ ২লাখ ৬৩ হাজার ২৫৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ জন।

কুড়িগ্রাম-২ আসনে কুড়িগ্রাম সদর- ৯১টির মধ্যে ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, ফুলবাড়ি-৫০টির মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ, রাজারহাট-৬৩টির মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র-২০৪টির মধ্যে ৬৪টি ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র ২০৪টিতে ভোটকক্ষ-১২৪৭টি রয়েছে। ভোটার- ৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ জনের মধ্যে পুরুষ- ২লাখ ৮০ হাজার ৭৩৬ জন এবং নারী-২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৩ জন।

কুড়িগ্রাম-৩ আসন উলিপুর থানায় ১৩৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র-১৩৯টিতে ৮০৬টি ভোট কক্ষ আছে। ভোটার ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৬১ জনের মধ্যে পুরুষ- ১লাখ ৭১ হাজার ৫৭০ জন এবং নারী-১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯১ জন।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে চিলমারী-২৯টির মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, রৌমারী-৬১টির মধ্যে ৫১ ঝুঁকিপূর্ণ, রাজিবপুর-২৭টির মধ্যে ০৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঢুষমারা থানায় ২২টির সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ। এই আসনে-১৩৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। ভোটকেন্দ্র-১৩৯টিতে ভোট কক্ষ ৭৯৮টি রয়েছে। ভোটার- ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ- ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৮ জন এবং নারী- ১লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৯ জন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুল আরীফ বলেন, সাধারণ ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু করতে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাব এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।

(ঢাকাটাইমস/১জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :