দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেলের কী কাজ?

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয় দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল। তবে এর কার্যকারিতা না থাকায় সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে দায়সারা প্রতিবেদন পাঠিয়েই ক্ষান্ত থাকে এই সেল। আমদানিকারকরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, কখনো অতিরিক্ত দ্রব্য আমদানি হয়। আবার কখনো দ্রব্যের সংকট তৈরি হয়। কী পরিমাণ উৎপাদন এবং কী পরিমাণ মজুত তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশে কোন দ্রব্যের চাহিদা বছরে কত, ঋণপত্র পরিস্থিতি ও তা নিষ্পত্তিসংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। এজন্য ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দ্রব্য।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দেওয়া হয় সচিবের কাছে। তবে প্রতিবেদনে কী থাকে তা সচিব ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেন না। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিবেদনে মূলত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর সম্পর্কে তথ্য থাকে। আমদানি করা বিভিন্ন নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ও স্থানীয় বাজারমূল্যের প্রবণতার তথ্যটি সচিবকে অবগত করা হয়। তবে কোনো সুপারিশ করা হয় না, সুপারিশ করা হলেও সেগুলো কাজে আসে না।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেল থেকে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া গেলে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। এ বছর রমজানে দেশে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে। এতে অনেককেই লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এ-সংক্রান্ত আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তাদের জন্য সুবিধা হতো।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দেশের একটি বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সবকটি সভায় উপস্থিত থাকলেও তিনি এই সেল সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রথম বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম।’আরেকটি শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা বলেন, দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করতে পারে। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক দেশে এ ধরনের কার্যক্রম আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) নামে একটি সংস্থায় দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকে।
দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব খাতে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর পূর্বাভাস সেল গঠিত হয়। এই সেলের কাজ ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, মজুত ও সংগ্রহ পরিস্থিতি এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিবিধ তথ্যের পর্যালোচনা এবং আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। এই কাজের অংশ হিসেবে পূর্বাভাস সেল বিভিন্ন সংস্থা থেকে পণ্যের উৎপাদন, মজুত, সংগ্রহ পরিস্থিতি ও বিতরণ ব্যবস্থা, পণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদর, বন্দরে পণ্য খালাশের পরিমাণ, পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণপূর্বক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারের করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হিসেবে কাজ করার কথা।
পদ ১১, আছেন ৩ জন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠিত হয়। এখানে যুগ্ম সচিব মর্যাদার একজন বাণিজ্য পরামর্শক, দুজন সহকারী পরামর্শক, দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তিনজন অফিস সহায়কসহ এগারোটি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে মাত্র তিনজন কর্মরত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) মো. রুহুল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যভান্ডার তৈরি করতে একটি সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ চলছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সফটওয়্যার নির্মাণ করছে। ভারত সরকার ২০১৯ সালে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলে দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে দেশে চিনির সংকট। এর মধ্যে কয়েক দফা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দামে চিনি মিলছে না। এ ক্ষেত্রে পূর্বাভাস সেল কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যদিও সরকারের উদ্যোগটি ভালো ছিল। তবে এই পূর্বাভাস সেলটি যাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা উচিত। নয়তো এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে না।’
(ঢাকাটাইমস২৩ফেব্রুয়ারি/কেএ/এসআইএস)

মন্তব্য করুন