শরীয়তপুরে কালোজিরার মধু চাষ, তৃপ্তির হাসি চাষির মুখে

​​​​​​​ শরিয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৬ | প্রকাশিত : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫২

ফুলের সঙ্গে মৌমাছির নিবিড় বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের টানে ফুলের সংস্পর্শে এসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটু একটু করে মধু আহরণ করে জমা করে মৌচাকে। সেই মৌচাক থেকে মধু আহরণ করার জন্যই মৌমাছির সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে মানুষের।

শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত মৌ খামারগুলোতে মৌ চাষি আর মৌমাছির সেই সখ্যের চিত্রই দেখা গেছে।

মৌসুম এলেই শরীয়তপুরের বেকার যুবকেরা মধু উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। অধিক পরিমাণে মধু উৎপাদনও করতে পারেন তারা। এর মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন।একই সঙ্গে মধু চাষের সফলতায় তৃপ্তির হাসি ফোটে কৃষক ও কৃষকের পরিবারে।

জানা যায়, কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়ায় এই এলাকায় ব্যাপক হারে রবিশস্য চাষ হয়। এজন্য এখানে মৌমাছির বিচরণও বেশি থাকে। যা মৌ চাষিদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

সরেজমিন শরিয়তপুরের বিভিন্ন এলাকা ‍ঘুরে দেখা যায়, কালোজিরা, ধনিয়া সরিষাসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষ হলেও কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, বছর শরীয়তপুর জেলায় হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে কালোজিরা, হাজার ০৫৬ হেক্টর জমিতে ধনিয়া এবং হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সবমিলে ২৪ হাজার ২৬ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৪০ হেক্টর জমি মৌ চাষের আওতায় রয়েছে। মৌ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে হাজার ৫৮০টি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৩০ হাজার ৬০০ কেজি মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ১২০ কেজি মধু আহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কালোজিরার মধু হাজার ৪৮০ কেজি, ধনিয়ার মধু হাজার ৪৫০ কেজি এবং সরিষা ফুলের মধু হাজার ১৯০ কেজি।

মৌ চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, শরিয়তপুরে উৎপাদিত মধু পাইকারি খুচরা বিক্রি করেন তারা। সারা বছর মৌমাছি লালনপালন কর্মচারীদের পেছনে খরচ করা টাকা এখান থেকেই আয় করেন তারা। বছর মধুর বড় একটা অংশ কালোজিরা ফুলের মধু থেকে উত্তোলন করার আশা করছেন চাষিরা।

মৌ খামারের কর্মচারী ছানোয়ার হোসেন বলেন, মৌমাছির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে আমাদের। মৌ খামার থেকে যে বেতন পাই, তা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়। মধু বেশি উৎপাদন করতে পারলে মালিক সম্মানী দেন বেশি। বছর মধু উৎপাদন ভালো হবে বলে মনে করছেন তিনি।

মধু চাষের সফলতায় একে অপরের দেখা দেখি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও মৌ খামার গড়ে তুলতে চান।

জাজিরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক (কৃষি) দিপক প্রকাশ বসু বলেন, জাজিরার কালোজিরার মধু জেলার ব্রান্ডিং পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা গর্বের বিষয়। কালোজিরার মধু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালোজিরার মধু উৎপাদন আরো বেশি নজর দিবেন।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বীথি রানী বিশ্বাস বলেন, বছর জাজিরাসহ অন্যান্য উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে রবিশস্য উৎপাদন হয়েছে। মৌসুমে জেলার মৌ চাষিরা বিভিন্ন স্থানে উৎসাহ নিয়ে মধু উৎপাদন করছে। নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি মানবদেহের জন্য উপকারী মধু উৎপাদন করে তারা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে ভূমিকা রাখছেন।

গত বছরের তুলনায় বছর মধু উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক . রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, শরীয়তপুরে যে পরিমাণ মৌচাষ হচ্ছে তা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, বছর জাজিরায় কালোজিরার মধু অধিক উৎপাদন হওয়ায় এটি জেলার ব্রান্ডিং পণ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বর্তমানে এর চাহিদাও বাড়ছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ হয়। মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি শস্য চাষি উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন। মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমনি মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।

(ঢাকাটাইমস/২৯ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :