বগুড়ার ধুনটে আলোচিত স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০২৪, ২০:৩৮

বগুড়ার ধুনটে আলোচিত স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বগুড়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার একমাত্র আসামি কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়।

এদিকে প্রমাণ না পাওয়ায় আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা ধুনট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১২ মে বগুড়ার ধুনটে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুরাদুজ্জামান মুকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট বগুড়ার পুলিশ সুপার বরাবর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত নষ্টের অভিযোগ করেন ধর্ষিতার মা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে মামলার তদন্তভার বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তারা বাদীর তথ্যের ভিত্তিতে ধর্ষণ মামলায় জব্দ হওয়া তিনটি মোবাইল ফোনসেট ৪টি ল্যাবে ফরেনসিক টেস্টে পাঠান। কিন্তু পরীক্ষায় ভিডিও ডিলিট করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির।

রবিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগপত্র দাখিল ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির।

পুলিশ সুপার জানান, গত বছরের ১২ মে ওই স্কুলছাত্রীর মা ধুনট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় একই উপজেলার শৈলমারী গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদীর বাড়ির নিচতলার উত্তরপাশের ফ্লাটে মুরাদ ভাড়া থাকতেন। মামলার বাদী এবং তার স্বামী স্কুল শিক্ষক। এ কারণে তারা কর্মস্থলে গেলে তার মেয়ে স্কুলছাত্রীটিকে বাসায় ডিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করতো মুরাদ। গত ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল একইভাবে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গেলে তার চিৎকার শুনে অন্য মেয়ে সেখানে গেলে মুরাদ পালিয়ে যায়। বাদী অভিযোগ করেন- তার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে মুরাদ। পুলিশ মামলাটি গ্রহণের পর মুরাদকে আটক করে এবং তাকে ওই মামলায় জেল-হাজতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে বাদী অভিযোগ করেন যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওসি কৃপাসিন্ধু বালা আসামির মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ডিলিটসহ আলামত নষ্ট করেছেন। এ কারণে আদালতের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

পুলিশ সুপার এহসান আরও বলেন, তদন্তকালে আসামিকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও প্রদান করেন। এদিকে বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি কৃপাসিন্ধু বালার বিরুদ্ধে তিনি নিজে বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তে মুরাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তে বেশকিছু অসংগতি উঠে এসেছে, সেসব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে ভিডিও ডিলিটের বিষয়টির প্রমাণ মেলেনি। এখনও ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার এহসান।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করে আসছেন। সঠিক চার্জশিট দেওয়ার জন্য তিনি প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ওসি কৃপা সিন্ধু নিজেই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আসামি মুরাদের সঙ্গে আপস করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেন তিনি। মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালাকে আসামি না করার অর্থ তার অপরাধের বিচার থেকে ছাড় দেওয়া। দাবি করেন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :