সহকর্মী পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যার কারণ নিয়ে যা জানা গেল

রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা বারিধারায় দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মী পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে আছেন কনস্টেবল কাওছার আলী। চারদিনের জিজ্ঞাসাবাদে এখনো মনিরুল হত্যার কারণ জানতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
হত্যার দায় কাওছার স্বীকার করলেও ঘটনার দিন কী হয়েছিল সেটা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে কাওছারের মানসিক অসুস্থতার কথা বললেও পুলিশ বলছে, তাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। ঘটনা ভিন্ন দিকে নিতেই এই ধরনের কথা ছড়ানো হচ্ছে।
শনিবার (৮ জুন) রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় কাওছার সাব মেশিনগান এসএমটি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। তার গুলিতে জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও আহত হন।
ওই ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চারদিন পার হলো।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, কাওছার তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করেছে সেটা ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। এটা এখন আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে কি কারণে হত্যা করা হলো এটা এখনো আমরা জানতে পারিনি। চারদিনেও তার কাছ থেকে এই রহস্য বের করা যায়নি। কাওছার একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে। আজকেও ঊর্ধ্বতনরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমরা দ্রুতই এর একটা সমাধান টানতে পারব।
এদিকে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা মামলা তদন্ত করছি। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো তা জানতে কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলায় নতুন কোনো তথ্য নেই।’
গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জাহাঙ্গীর হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।’
হত্যার কারণ জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো পুরোপুরিভাবে কোনো কিছু নিশ্চিত হতে পারিনি। এ বিষয়ে কাজ চলছে; পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। আর নিহত পুলিশ সদস্যের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়।
ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে কনস্টেবল মনিরুল ও কাওছারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিজের সঙ্গে থাকা অস্ত্র দিয়ে মনিরুলকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছোড়েন কাওছার। উন্মাদের মতো ছোড়া ৩৪টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মনিরুলের শরীরে গুলি লেগেছে ছয়টি। ঘটনার পরপরই তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবার নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের হাতে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত এসএমটি সাব মেশিনগান দেওয়া আছে। এই অস্ত্র দিয়ে মিনিটে ৬০০টি গুলি করা যায়।
যে ধারায় মামলা:
নিহত মনিরুল ইসলামের ভাই মাহাবুবুর হক বাদী হয়ে করা মামলায় ৩০২/৩০৭/৩২৬ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে এসএমটি অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে মৃত্যু ঘটানো ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করার অপরাধ আনা হয়। পুলিশ গুলির ঘটনার পর একটি এসএমটি অস্ত্র, ২টি ম্যাগজিন, ২২টি গুলি, ৩৪টি গুলির খোসা, একটি চায়নিজ রাইফেল ও ২০টি গুলি উদ্ধার করেছে। নিহত মনিরুল ইসলামের ভাই ও মামলার বাদী মাহাবুবুর হক মহাখালী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।
(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এসএস/কেএম)

মন্তব্য করুন