শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ
শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্যদিয়েই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে

বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই সময় তার মুক্তি দাবিতে ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দেয়। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে। যুগপৎভাবে বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের।
সেদিন ভোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২ সহস্রাধিক সদস্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদন ঘেরাও করে। সে সময় শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সুধা সদন থেকে বের করে নিয়ে আসে এবং বন্দি অবস্থায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইনবহির্ভূতভাবে নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার অবরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিটের অগ্নিঝরা বক্তৃতার মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
গ্রেপ্তারপূর্ব মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা একটি চিঠির মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত প্রতিরোধ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুকন্যার আপসহীন ও দৃঢ় মনোভাব এবং দেশবাসীর অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ‘ঈর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন।
শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা অনেক আগেই পূরণ করেছেন। ইতোমধ্যেই জনগণের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করতে পেরেছেন। গুণগত ও সংখ্যাগত- দুই দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। যারা সে সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়েছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। শেখ হাসিনা সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। দেশবাসী আজ এর সুফল পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত, মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন থেকে রিজার্ভ ৪৮.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত, ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত ও প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোরজি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে দেশের নয়টি জেলার ২১১টি উপজেলায় সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসিত করা সম্ভব হয়েছে। এটি বিশ্বকে তাক লাগানোর মতো একটি বিস্ময়কর ঘটনা অবশ্যই। বিনামূল্যে নামজারিসহ দুই শতক জমিতে পরিকল্পিত বাসগৃহ পেয়ে ছিন্নমূল গৃহহীন পরিবারগুলো আনন্দে আত্মহারা। এর পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার। পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসেবে এই কার্যক্রমে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
বাকি ২১ হাজার ৪০টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না- অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে গৃহশুমারি করে সরকার অবগত হয় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ তখন ছিলেন ভূমিহীন-গৃহহীন অথবা যাদের জমি আছে ঘর নেই। সেই তালিকা অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিতদের চিহ্নিত করে ঘর দেওয়া হচ্ছে পর্যায়ক্রমে।
শেখ হাসিনার গত চার মেয়াদে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশিরাও বাংলাদেশের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারি লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার যে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।
লেখক: সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮; সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি; শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।

মন্তব্য করুন